অসহায় পিতার আকুতি নওগাঁর আদালত, রুকাইয়া কি এতিম থাকব ?

ক্রাইম রিপোর্ট

কামাল উদ্দিন টগর নওগাঁ জলা প্রতিনিধি:

মা মরা সন্তানকে এতিম করবেন না, আমি রুকাইয়ার বাবা, রুকাইয়ার একমাত্র অভিভাবক। অবুঝ সন্তানকে জিম্মি করে আমার সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা দিচ্ছে শাশুড়ি। সাড়ে ৩ বছরের কন্যা সন্তান এখন আমাকে ভয় পাচ্ছে! আপনারা বলছেন, সন্তান আমাকে চিনছে না, ভয় পাচ্ছে। কিন্তু কেন? আমার কোলে দিলে ভয়ে চিৎকার করলো, আর আদালতের লোকজন কোলে নিলে চিৎকার করলো না কেন? অবুঝ শিশুকে পিতার সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়ে রুকাইয়াকে জিম্মি করেছে আমার শাশুড়ি। আজ জাতির বিবেকরা কোথায়? মা নেই বাবা আছে, রুকাইয়া কি এতিম থাকবে? আমার একমাত্র কন্যা সন্তানকে আমার কাছ থেকে দূরে রেখেছে। অনেক আকুতি করেছি, আদালতের বিচারকও আমার কথা শুনছেন না। অসুস্থ ছিলাম, সন্তানকে দেখতে পারিনি, আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে ছিলাম, সেসময় স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জেনেছি, স্ত্রী মারা গেলেও শেষবার দেখা বা কথা বলতেও পারিনি।”

সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বারান্দায় এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন অসহায় পিতা রাসেল মাহমুদ। তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক ও গণমাধ্যমকর্মী।

গত ৪ জুলাই ১০০ ধারায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করে শিশু রুকাইয়া তাবাচ্ছুমকে উদ্ধারের প্রার্থনা করেছেন।

বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার কামুল্যা গ্রামের আলহাজ্ব আব্দুল মোত্তালেব সাংবাদিকদের জানান, আমার ছেলে রাসেল মাহমুদের সাথে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বড়সাঁওতা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আলাউদ্দিনের মেয়ে আলপনা বানুর সাথে ২০১২ সালে বিবাহের পরেও আলপনার লেখাপড়ার প্রতি অটুট আগ্রহ ছিল। বিবাহের পরেও সংসারের কাজে ব্যস্ত না রেখে রাজশাহীতে রেখে আলপনা বানুকে পড়ালেখা করিয়েছি। আমার এলাকার লোকজনও বিষয়টি জানে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের ফাতেমা ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে আলপনা বানু কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। \

এরপর ২০১৬ সালে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে আত্রাই উপজেলার ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে। পিতার বাড়ি বড়সাঁওতা গ্রামের পাশেই ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেকারণে পিতার বাড়িতে থেকেই চাকুরি করতো আলপনা বানু। রাসেল মাহমুদ নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পেশার কারণে থাকতো নিজ এলাকা নন্দীগ্রামে। মাঝেমধ্যে শ্বশুড় বাড়ি গেলেই শাশুড়ি ঘরজামাই রাখার প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু রাজি ছিলেন না রাসেল। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে অসুন্থ হয়ে পড়েন রাসেল মাহমুদ। ৫ মাস বিছানাকাতর থাকায় স্ত্রী-সন্তানের কাছে যেতে পারেনি। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিল, রাসেলের পিতা আব্দুল মোত্তালেব মাঝেমধ্যেই ছেলের বউ এবং নাতনীকে দেখতে যেতেন।

ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে নতুন জামা দিয়ে আসতেন। চাকুরে হলেও স্ত্রীর বেতনের টাকা শাশুড়ির কাছেই রাখতো। তারপরেও স্ত্রী সন্তানের নিয়মিত খরচ পাঠিয়েছেন রাসেল। শ্বশুড় বাড়িতে হঠাতই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ৫ মে বগুড়ার নিউ পল্লী ক্লিনিকে অসুস্থ রাসেলের অপারেশন হয়। ২০ মে রাসেলের কাছে খবর আসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী আলপনা বানু ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অসুস্থ অবস্থায় শ্বশুড় বাড়িতে ছুটে গিয়ে বড়সাঁওতা গ্রামেই স্ত্রীর দাফন করতে যান রাসেল ও তাঁর গ্রামের লোকজন।

রাসেলের দুলাভাই আলমগীর জানান, স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে রাসেল তাঁর শ্বশুড় বাড়িতে একমাত্র কন্যা সন্তান রুকাইয়াকে দেখতে যায়। স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর জমানো টাকা কোথায় আছে, সেটা সন্তানের নামে ব্যাংকে রাখার প্রস্তাব দেয় রাসেল। এতেই জ্বলে ওঠেন শাশুড়ি।

তিনি বলেন, শাশুড়ি শিউলী বেগম, শালিকা শিমা আকতার ও শ্যালক শাওনের নিয়মিত হুমকির শিকার হয় রাসেল। গত ১৬ জুন সন্তানকে দেখতে শ্বশুড় বাড়িতে গেলে রাসেলের ওপর চড়াও হয় শাশুড়ি সহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন। পরে স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকদের সহায়তায় রাসেল থানায় গিয়ে সন্তান উদ্ধারের জন্য লিখিত অভিযোগ করে। সেখানেও ব্যর্থ হন রাসেল। পরে ৪ জুলাই সন্তান উদ্ধারের দাবিতে নওগাঁর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা নং ৩২৫ দায়ের করেন অসহায় সন্তানের অসহায় পিতা রাসেল মাহমুদ।

এ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম জানান, অসহায় পিতার কাছ থেকে একমাত্র সন্তানকে আলাদা করেছে শাশুড়ি। অবুঝ শিশুকে পিতার সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে রেখেছে। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক এখনো রায় দেননি। আত্রাই উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আত্রাই থানার এএসআই কামরুজ্জমান বলেন, রাসেল মাহমুদ সন্তান উদ্ধারের জন্য থানায় অভিযোগ করেছিল। তৎকালিন ওসি স্যারের নির্দেশে আমি প্রাথমিকভাবে চেষ্টা করেছি। আদালতের নির্দেশপত্র ছাড়া এটা অসম্ভব। আদালতের সার্চ ওয়ারেন্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে আদালতে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন ওসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *