কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এলো মুন্সীগঞ্জে মাত্রাতিরিক্ত মিশুকের নেপথ্য কারণ গ্যারেজ মালিকরা দাদন দিয়ে চালক জোগাড় করছে

ক্রাইম রিপোর্ট

শেখ আলী আকবর, মুন্সীগঞ্জ:
শেষ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ শহরে অত্যাধিক মিশুক চলাচলের নেপথ্য কারণ গ্যারেজ মালিকরা তাদের ক্রয়কৃত মিশুকের চালক জোগাড় করতে না পারায় অগ্রিম দাদন দিয়ে চালক
জোগাড় করছে।মুন্সীগঞ্জ শহরে অসংখ্যা মিশুক চলাচলের বিষয়টি এখন পথচারীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, এসব মিশুকের গ্যারেজ মালিকরা তাদের ক্রয়কৃত মিশুক রাস্তায় চালাতে না পারায় একদম আনকোড়া
অদক্ষ চালকদের অগ্রিম দাদন দিয়ে ভাড়ায় গাড়ি চালাতে দেয়। এসব মিশুক চালকদের শতকরা আশি ভাগ বৃহত্তর রংপুর জেলার অধিবাসী। একসময়ের মংগার দেশ হিসেবে
পরিচিত রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীসহ অন্যান্য এলাকার লোকজন মুন্সীগঞ্জ জেলায় আলুর মৌসুমে কৃষি মজুর হিসেবে কাজ করতে আসে। পরে মুন্সীগঞ্জ শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় কেউ কেউ পায়ে চালার রিক্সা চালাতো। পরে এসব রিক্সায় ব্যাটারী চালিত ইঞ্জিন লাগানোর পর এসব রিক্সা চালকের
সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকলে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকলে একসময় প্রায় দুবছর পূর্বে মুন্সীগঞ্জ শহরে ব্যাটারী চালিত রিক্সা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এর পরও শহরের আনাচে কানাচে এসব ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলাচল অব্যাহত থাকে এবং যারা এসব রিক্সা চালাতো তারা পরে অনেকেই অটো চালাতে থাকে।
মুন্সীগঞ্জ শহরে পায়ে চালিত রিক্সার সংখ্যা শতকরা ৯০ ভাগে কমে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭১ তম জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ্জ ফয়সাল বিপ্লব ৭১ টি পায়ে চালিত রিক্সা বিনামূল্যে বিতরণ করেন। কিন্তু এসব রিক্সার ২/১টি কদাচিং
মুন্সীগঞ্জ শহরে চলাচল করতে দেখা যায় এবং বাকিগুলির কোনই হদিস নেই। ২০১৮ সালের শেষ দিকে দু একটি মিশুক মুন্সীগঞ্জ শহরে চলাচল শুরু করে। কিন্তু ব্যাটারী চালিত এসব অটো ও মিশুক চালকদের সরকারি কোন অনুমোদনের বালাই না
থাকায় ধীরে ধীরে এসব অটো ও মিশুকের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে মিশুকের সংখ্যা এতো বেড়েছে যে, মেইন রোড তো বটেই অলিগলিতেও রাস্তা পার হওয়া দায়। এসব অটো ও মিশুকের ব্যাটারী চার্জ করতে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা।

বিশেষ করে মিশুক চালকদের শতকরা আশি জনের কোন সাক্ষর জ্ঞান নেই এবং এরা জীবনে কোনদিন বাই সাইকেলও চালায়নি।
সেলিম নামের মিশুক চালক জানান, আমি আগে প্রায় ১০/১২ বছর বাস চালিয়েছি। এখন নানা কারণে আর বাস চালাতে ভালো লাগে না। তাই এই মিশুকটি কিনে নিজেই চালাচ্ছি। সে আরো জানায়, মুন্সীগঞ্জে এতো মিশুকের ছড়াছড়ির কারণ কি জানেন? যেহেতু ব্যাটারী চালিত মিশুক ও অটো চালকদের কোন প্রকার অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। পুলিশও দলীয় নেতাকর্মীদের চাঁদা দিলেই সব সমস্যার সমাধান। তাই এসব যানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এখন গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীও অনেক কম পাওয়া যায়। কারণ, যাত্রীর চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশি। তাছাড়া অটোর চেয়ে মিশুকের দাম কম হওয়ায় অনেকেই ১০ থেকে ২০টি মিশুক কিনে ভাড়া গ্যারেজ বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছে। এরা চালক যোগাড় করতে
না পেরে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও অদক্ষ মানুষকে অগ্রিম দাদন দিয়ে এসব মিশুক গাড়ি ভাড়া দিচ্ছে। উল্লেখ্য, এসব মিশুক চালকদের অনেকেই শহরের রাস্তাঘাট চেনে না। বিশেষ করে এসব নবাগত মিশুক চালকরা মুন্সীগঞ্জ শহর কাঁচাবাজারের পুর্ব পাশে ভীড় করে
থাকে এবং এরা রাস্তাঘাট না চিনায় চর কিশোরগঞ্জ ছাড়া অন্য কোন স্থানে যায় না ও যেতেও চায়না। তাই এসব অটো ও মিশুক চালকদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামীতে পথচারীদের পথ চলা দায় হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *