স্কুলছাত্রী পলি হত্যার বিচার দাবীতে মানব বন্ধনঃ টাকা তো আমাকে আর মা ডাকবে না, যে ডাকার সে তো আর নাইঃ

ক্রাইম রিপোর্ট


চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ 
“মেয়ে হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে আমি পুলিশের কাছে আশ্রয় চেয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এস আই আবদুল্লা আল মামুন আমার কোন কথা না শুনে উল্টো আমাকে বলে আমি পাগল। মামলা করতে চাইলে আমাকে টাকার অফার দেন। আমি টাকা দিয়ে কি করবো। টাকাতো আর আমাকে আর মা বলে ডাকবে না। যে ডাকার সে তো আর নাই”। রবিবার( ৬  অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে স্কুল শিক্ষার্থী রেবেকা সুলতানা পলি হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজিত মানববন্ধনে নিহত পলির মা ছকিনা খাতুন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সারারাত থানায় বসে থাকার পরও পুলিশ আমার অভিযোগ আমলে নেয়নি। পুলিশ বারবার বলছে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পলি কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে উল্টো মামলা করতে গেলে তারা আমার মামলা নিতে চায়নি। আমি গরিব বলে।  তিনি আরও  বলেন, ‘কেউ আমার মেয়েকে আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি চাইনা আমার মতো আর কোন মা তার সন্তানকে হারাক। আমি চাই সুষ্ঠু বিচার। তাহলে পলির আত্মা একটু হলেও শান্তি পাবে’।মানববন্ধনে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪ লাখ টাকার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা খুবই অনৈতিক। শুনেছি-পলির ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করতেও প্রভাবশালীরা উঠেপড়ে লেগেছেন। তাই আজকের এই মানববন্ধন থেকে বলতে চাই, সাহস নিয়ে কখনো এই কাজ করবেন না। এ কাজ করলে চট্টগ্রামের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট একটু এদিক-সেদিক হলে চট্টলার ছাত্রসমাজ রাজপথে নামবে এবং কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিবে। সাবেক কাউন্সিলর রেহানা বেগম রানু বলেন, মেয়েকে হারিয়ে আজকে পলির মায়ের বুকে আগুন জ্বলছে। এ আগুন টাকা দিয়ে কখনো নিভানো যাবে না। টাকার অফার না দিয়ে, পারলে পলিকে ফিরিয়ে দিন। জানি কখনোই এটা সম্ভব নয়। আর কারও সাধ্যও নেই। আজকে বলতে চাই, পলির সুষ্ঠু বিচার নিয়ে কেউ যদি কারসাজি করে আমরা কেউ আর বসে থাকবো না। প্রয়োজন হলে থানা ঘেরাও করা হবে। সুচিন্তা বাংলাদেশের বিভাগীয় সমন্বয়ক জিন্নাত সোহানা চৌধুরী বলেন, একটি মাসুম বাচ্চাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা এটা নজিরবিহীন ঘটনা। গ্রেপ্তার অভিযুক্ত যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হতে না পারে সে জন্য অবশ্যই নজর রাখতে হবে। আর এই ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে কোন আইনজীবী  যেন আদালতে সুপারিশ না করেন সে দাবিও করেন তিনি। একই সাথে পলি হত্যার বিচারের জন্য সকল প্রকার আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বলেন, একদিন আমিও বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছি। আজ আমার মতো পলির মা ও তার ভাইসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। এভাবে আর কতদিন রাস্তায় নামতে হবে জানিনা। হত্যার বিচার চাইতে আমাদের কেন রাস্তায় নামতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করুন। আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়, সে ব্যবস্থা করুন। মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন ফাইট ফর উইম্যান রাইটস’র সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর এডভোকেট রেহানা বেগম রানু, এমইএস কলেজের প্রভাষক ববি বড়ুয়া, নগর ছাত্রলীগের সদস্য মো. পাভেল, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রায়হান উদ্দিন, নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী, পলির বড় ভাই রাসেল রানা, মানবধিকার কর্মী আরিফুর রহমান, পলির ক্লাসমেট তামান্না ইসলাম প্রমুখ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মীরা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য যে, গত ২ অক্টোবর রাতে হালিশহরের কুড়িপুকুর পাড় এলাকার খান টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট থেকে রেবেকা সুলতানা পলি নামের ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *