হেলাল শেখঃ
বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা ও উপজেলায় প্রাইভেট ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং বেসরকারী শিক্ষকরা বিপাকে পড়েছেন। কোভিড-১৯, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারি শিক্ষক, কর্মচারি, কর্মকর্তাগণ বেতন ভাতা পাচ্ছেন কিন্তু কিন্ডারগার্টেন, প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকরা কোনো প্রকার বেতন ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ, সেই সাথে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের সকল অফিস আদালত নিয়মিত চলছে, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে অভিবাবকরা চিন্তায় রয়েছেন বলে অনেই জানান। বিশেষ করে ডেনমার্ক উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষকদের বেতন ভাতা সর্বোচ্চ বাংলাদেশের সমপরিমান টাকা ৭ লাখ, সর্বনিম্ন ৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ, এখানে বেসরকারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা বর্তমানে ১২৫০০, ১৬০০০, ২২০০০, ২৩০০০, ২৯০০০টাকা স্কেলে মূল বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে, তাও তারা বেতন ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইভেট স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা কোনো প্রকার বেতন ভাতা এখন পাচ্ছেন না। বিশ্বে শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদায় সর্বোচ্চ স্থান পেলেও আমাদের দেশে সবচেয়ে তলানিতে। কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইভেট স্কুলগুলোর অনেক শিক্ষকের অভিযোগ- করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই বেতন ভাতাও দিচ্ছেন না প্রতিষ্ঠান মালিক। আমরা যারা শহরে বসবাস করি আমাদের বাসা ভাড়া, বাজার খরচ বন্ধ নেই। খাবার খাওয়া লাগবে, বাসা ভাড়া বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। কোনো মালিকই কম নিচ্ছেন না,
তাই অনেক শিক্ষককেই রিক্সা চালাতে হচ্ছে। গার্মেন্টস কোম্পানিগুলো শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, কোথাও চাকুরি নেই। অনেক শিক্ষিকা ও নারীরা বলেন, পেটের দায়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাজ খোঁজছি, কোনো কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক নারী বাঁচার জন্য জীবন যুদ্ধে লড়াই করছেন, কেই আবার অবৈধ কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে সাথে সাথে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান। গত ১১ নভেম্বর ২০২০ইং দুপুরে অনলাইনে সাংবাদিকদের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি জানান, আমরা এ মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৫ তারিখ থেকে খুলবে কি না, না কি এই ছুটি আরও বাড়বে নাকি কোনো কোনো ক্লাসের আমরা সীমিত আকারে শুরু করতে পারবো-এসব বিষয় নিয়ে এখনো কাজ করছি। বৃহস্প্রতিবার ১৯ নভেম্বর ২০২০ইং পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ হাজার ৩৬৪ জনে। একই সময়ে নতুন করে দুই হাজার ৩৬৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে চার লাখ ৪১ হাজার ১৫৯ জনে। এছাড়া বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৩৪জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন তিন লাখ ৫৬ হাজার ৭২২জন। বৃহস্প্রতিবার (১৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নিয়মিত সংবাদে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আসন্ন শীতে করোনা ভাইরাস ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জন্য অনেকেই বলেন যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে হয়ত এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না। তবে সরকার চাইলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এ বিষয়ে প্রাইভেট স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা মোছাঃ ইসরাত জাহান কিচমু বলেন, এ বছরে আমার মতো অনেক শিক্ষিকা ও তাদের পরিবারের লোকজনের এক বেলা খেয়ে, আর এক বেলা না খেয়ে, মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ, বেতনও বন্ধ, এখন প্রাইভেট পড়ানো প্রায় বন্ধ রয়েছে। ২০% শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ছে, তাও ঠিকমত পড়াশোনা হচ্ছে না বলে তিনি জানান। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার আশুলিয়ার জনাব ছাফর শেখসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকগণ বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা ও অভিবাবকরা অনেক চিন্তায় আছি।
আল্লাহ জানেন কি হবে। তবে সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি দেশবাসীকে অবশ্যই হেফাজত করবেন, আমিন।