বরিশালের বানারীপাড়ায় একটি পরিবারের জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ ওঠেছে বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলমের বিরুদ্ধে। পরিবারটির দাবি, তাদের ছাড়াও আরও ১২টি পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রতন ঘরামী নামের একজন ভুক্তভোগী মঙ্গলবার বিকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন।
রতন বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠি ইউনিয়নের পশ্চিম তেতলা গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে রতন বলেন, ‘১৫ দিন আগে এমপি শাহে আলম আমাকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে আমার জায়গায় একটা প্রজেক্ট করার কথা জানান। এ জন্য আমার জায়গা তাকে লিখে দিতে বলেন। এরপর থেকে তার লোকজন আমাকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে এবং এমপি শাহে আলমকে জায়গাটা লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করে।
‘আমি ছাড়া আরও ১২টি পরিবারেরও একই অবস্থা। তাদের জায়গাও এমপি জবরদখল করে লিখে নিতে চায়।’
রতনের ভাষ্য, ‘সোমবার রাতে এমপির নিদের্শে স্থানীয় মেম্বার ইব্রাহীম, এমপির ম্যানেজার আল আমিন, তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খান আমার বাড়িতে গিয়ে আমাদের আটকে রাখে। তারা জানায় সকালে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিলে স্বাক্ষর করতে হবে।’
‘এমন ঘটনা শুনে আমার আত্মীয় স্বজনরা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করলে রাত ২টা ২০ মিনিটে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খানকে আটক করে।’
‘কিন্তু মঙ্গলবার সকালেই পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। পরে আমরা সকালে পালিয়ে বরিশাল আসি।
এ বিষয়ে আইনি সহায়তা চাইলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এখন আমার জীবন ও জমি দুইটাই ঝুঁকিতে। আমি আইনি সহায়তা চাইলেও পুলিশ আমাদের কোনো সহায়তা করেনি।’
সংবাদ সম্মেলনে রতন ঘরামীর ভাগ্নে সুমন রায় বলেন, ‘সোমবার রাতে এমপি শাহে আলমের লোকজন আমার মামার বাড়িতে গিয়ে ওঠে এবং সকাল হলেই জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য নিয়ে যাবেন বলে জানায়।
‘এতে আমরা কয়েকটি হিন্দু পরিবার ভয়ে বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে ছিলাম। পরে ৯৯৯ কল দেয়ার পর পুলিশ এসে আমার মামাকে উদ্ধার করে ও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’
সুমন আরও বলেন, ‘শুনেছি শাহে আলম সাহেব গরু ছাগলের খামার করবেন। এর জন্য তিনি ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। এখন আরও জমি লাগবে। তাই তিনি জোড় করে জমি দখল করতে চাইছেন।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছি।
‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাব। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।’
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম।
তিনি বলেন, ‘এটা টোটাল একটা মিথ্যা কথা ও ভাওতাবাজি। আমি ঢাকায় আছি। আমি জমি দখল করব কেন? বাংলাদেশে কি আর কোনো এমপি নেই যে হিন্দুদের জমি আমি দখল করবে। ওর (রতন) সঙ্গে পূর্বেও কোনো ঝামেলা ছিলে না। থানায় কথা বলে দেখেন।’
রতন নিজেই জমি বিক্রির কথা বলেছিল দাবি করে সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমার একটা জমি আছে। তার পাশেই রতনের একটা নিচু জমি। রতন নিজেই আমাকে জমি বিক্রির জন্য বলেছিল। ও বলছিলে, ওর ৭৮ শতাংশ জমি রয়েছে, কিন্তু ওর নামে রয়েছে ৩২ শতাংশ।
‘আমি এর মধ্যে রতনকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্যও করেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে এখন এমন অভিযোগ কেন করছে বুঝতেছি না। এর পিছনে অন্য কেউ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।’
এদিকে জমি দখলের অভিযোগের বিষয়টি জানেন না দাবি করে বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের বিরুদ্ধে কোনো জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ বা খবর আমার কাছে নেই।’
রতনের বাড়ি থেকে এমপির দুই অনুসারীকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তাও জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
সুত্র – Newsbangla24.com