আশুলিয়ায় ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুন্দরী অপহরণ: দুই মাসেও উদ্ধার হয়নি ভিকটিম

ক্রাইম রিপোর্ট


হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামগড়া বটতলা এলাকা হতে ৭ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী (ছদ্ম নাম) সুন্দরীকে অপহরণের প্রায় ৭০ দিনেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি বলে ভুক্তভোগী পরিবার জানায়। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের জন্য অভিযোগ করা হলেও ৭০ দিনেও থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়নি।
শনিবার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার চালিতাবুনিয়া এলাকার মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে দুই সন্তানের জনক ও একাধিক নারীর স্বামী মাদক ব্যবসায়ী ও কথিত কবিরাজ মোঃ মোশারফ হোসেন ওরফে রনি (২৭) আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের জামগড়া এলাকার স্থানীয় ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুন্দরী (১৪) কে কৌশলে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা জানায়-গত ২৮ নভেম্বর ২০২১ইং সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে ভিকটিম বাহির হলে বাড়ির সামনে রাস্তা হইতে তাকে অপহরণ করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি-এই নাবালিকা মেয়েকে অসৎ উদ্দেশ্যে অপহরণ করে নিয়ে গেছে অপহরণকারীরা।
জানা গেছে, উক্ত অপহরণকারী মোশারফ হোসেন ওরফে (রনি) দুই সন্তানের বাবা, সে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে অটোরিক্সা চালাতো এবং মাদক ব্যবসা ও কবিরাজি করতো। এদিকে এলাকাবাসী জানায়, ভিকটিমের পরিবারের সাথে অপহরণকারী ওই যুবকের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ হচ্ছে তাদের। মোশারফ হোসেন ওরফে রনি জুয়া ও মাদকের সাথে জড়িত, কবিরাজ সেজে নারীদের চিকিৎসার নামে দেহভোগ করা ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে এই যুবক। অনেকেই বলেন, এই যুবক নারীদেরকে নামমাত্র বিয়ে করে দৈহিক সম্পর্ক করে আর নারীর পেটে বাচ্চা আসলে বা বাচ্চা হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য নাবালিকা নারীদেরকে আবার কৌশলে জিম্মি করে নামমাত্র বিয়ে করে। অনেক নারীর জীবন নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে এই যুবকের বিরুদ্ধে।
উক্ত অভিযোগের তদন্তকারী অফিসার আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মামুন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এখন এ অভিযোগের তদন্ত দেওয়া হয়েছে (এসআই) সামিউলকে। এরপর এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামিউল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান আর ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য এবং অপহরণকারীদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে বলেও পুলিশের এই অফিসার জানান।
সূত্র জানায়, ১৩-১৪ বছরের ভিকটিমকে বিভিন্ন কৌশলে ভয় দেখিয়ে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে জিম্মি করে বাল্যবিবাহ করার অভিযোগ রয়েছে উক্ত কথিত কবিরাজ ও মাদক ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন ওরফে রনি’র বিরুদ্ধে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, মার্চ ১১, ২০১৭- আইন। ১৬ নাম্বারে বলা হয়, সরেজমিনে তদন্ত-আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোন অভিযোগ বা কার্যধারা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা নিরুপণের নিমিত্ত আদালত সরেজমিনে তদন্ত করিতে পারিবে অথবা কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্তরুপ তদন্ত করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্তরুপ তদন্ত কাজ ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করিতে হইবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে অতিরিক্ত আরও ১৫ কার্যদিবস সময় দেয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, আশুলিয়ায় বাল্যবিবাহ ও শিশু কিশোরী অপহরণ বেড়েইে চলেছে। ভিকটিমের মুক্তিপণের অর্থ না পেলে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। উক্ত ভিকটিম অপহরণের প্রায় ৭০ কার্যদিবস হলেও আশুলিয়া থানায় মামলা রেকর্ড হয়নি এবং ভিকটিম উদ্ধার ও অপহরণকারীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। উক্ত বিষয়টি রহস্যজনক বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (০৫/০২/২০২২ইং) ভিকটিমের বড় ভাই জানান, এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার (এসআই) সামিউল স্যার’ সকাল ১১ টায় থানায় ডেকেছেন, কিন্তু আজ আমার বাবা খুবই অসুস্থ- চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, আমার মা’কে থানায় পাঠিয়ে দিবো। ধারাবাহিক প্রতিবেদন এর ২য় পর্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *