সাভারে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান!

ক্রাইম রিপোর্ট

হেলাল শেখঃ  গার্মেন্টস ব্যবসায় লস খেয়ে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় গড়ে তুলেন জাল টাকার কারখানা। পরে নিজের তৈরি সেই টাকা নিয়ে লিচু কিনতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল চক্রের মূলহোতাসহ তিন সদস্য।

ঢাকার অদূরে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে এমনই এক অভিনব জাল টাকা কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। পরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ৫০ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট, বিপুল পরিমাণ জালটাকা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি, এক বোতল বিদেশি মদ, এক ক্যান বিয়ার ও ১০০ পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। বুধবার (২৪ মে) বেলা ১১টা থেকে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুরের পুরান বাড়ি এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সাখাওয়াত হোসেন খানের মালিকানাধীন সাউথ বেঙ্গল এপারেলস গার্মেন্টস কারখানায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আটকরা হলেন—বরিশাল জেলার মুলাদী থানার ডিগ্রীরচর খান বাড়ির জয়নাল আবেদীন খানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন খান (৫০), শরিয়তপুর জেলার পালং থানার গয়াধর গ্রামের আল ইসলাম সরদারের ছেলে সুজন মিয়া (৩০) ও বরিশাল জেলার মুলাদী থানার বয়াতিকান্দি গ্রামের মানিক মোল্লার ছেলে নাজমুল হোসেন (২৪)।

তবে স্থানীয়দের দাবি, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তারা ভাবতেন এখনো সেখানে শার্ট-প্যান্টই তৈরি করা হতো।

এ ব্যাপারে কারখানার পাশের বাড়ির মালিক ইব্রাহীম খান ঢাকা মেইলকে জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় পোশাক কারখানাটি পরিচালনা করছেন সাখাওয়াত হোসেন খান নামের ওই ব্যক্তি। পরে করোনা সময়ে গার্মেন্টস ব্যাবসায় লস খেয়ে কারখানাটির পাশের একটি জমিতে গরুর ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিছুদিন পর সেটিও বাদ দিয়ে পুনরায় কারখানার ভেতর কাজ টুকটাক কাজ করছিল বলে জানতাম। কিন্তু তিনি যে পোশাক কারখানার আড়ালে ভেতরে জাল টাকার তৈরি করত, সেটি আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। আজ সকালে পুলিশের অভিযানের ফলে বিষয়টি জানতে পারলাম।

এদিকে অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, দীর্ঘদিন পূর্বে তিনি এখানে কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে করোনার সময় তার বেশকিছু অর্ডার বায়াররা ক্যানসেল করে দেয়। এতে তিনি বেশ বেকায়দায় পরে এবং ব্যাংকের কাছে ৫-৭ কোটি টাকার মতো ঋণের বোঝায় পড়েন।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমার এই আর্থিক সমস্যার সুযোগে গত চার মাস আগে সাইফুল নামের এক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আহসান উল্লাহ মন্ডল ও নুরুনবী নামে আরও দুজন আমাকে এই জাল টাকা বানানোর জন্য প্রস্তাব দেয়। তারাই আমাকে এই জাল টাকা প্রস্তুতির সকল সরঞ্জামও সরবারাহ করত।

এ ব্যাপারে অভিযান শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম-(বার) বলেন, আজ সকালে সাভারের অন্ধ মার্কেটের সামনে থেকে জাল টাকা দিয়ে লিচু কিনতে গেলে দোকানদারসহ স্থানীয়রা জাল নোট শনাক্ত করে ও একজনকে আটক করে সাভার থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ আটক ব্যক্তিকে নিয়ে সাভারের বনগাঁওয়ের সাধাপুর পুরান বাড়ি এলাকায় ওই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ৫০ লাখ ১৭ হাজার নকল টাকা ও প্রিন্ট অবস্থায় আরও বিপুল পরিমাণের জাল টাকার সন্ধান পায়। পরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে কারখানার সব জাল টাকা উদ্ধার করে তিনজনকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গার্মেন্টসটির অভ্যন্তরে সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের সহায়তায় জাল নোট তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরুর হাটে এই জাল নোট ব্যবহার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। তাদেরকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর) আব্দুল্লাহিল কাফী- পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা ও বনগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোখলেসুর রহমানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা।

উল্লেখ্য, আটকদের বিরুদ্ধে, সাভার মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *