অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও বিভিন্ন শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজিকারী এবং গুজব রটিয়ে মার্কেটকে অস্থিতিশীলকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানী, নুরুল হক হারুন ও আব্দুল কাইয়ুম। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আমির হোসাইন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে ৮ থেকে ১০ টি গ্রুপ চালাতেন। যার মাধ্যমে শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি ও গুজব রটিয়ে মার্কেটকে অস্থিতিশীল করতেন। নুরুল হক হারুন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি। তিনি বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতেন। অপর অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম রয়েল ক্যাপিটাল নামক ব্রোকারেজ হাউজের সাথে যুক্ত। তিনি হোয়াটস্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতেন।
শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর একাধিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) বলেন, পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। দেশের অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব নিয়ে এসে বিনিয়োগ করে থাকেন। অল্পতেই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে। একটি স্বার্থান্বেষী চক্র দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়্যারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম-এ গোপনীয় গ্রুপ খুলে বিভিন্ন মিথ্যা, ভুয়া এবং প্রতারণামূলক তথ্য সরবরাহ করে আসছে। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো। তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিসস্থিতি তৈরি করতো।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল ২০২৪ রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উক্ত মামলায় তদন্ত করে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) বলেন, গ্রেফতারকৃতরা মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে গোপনীয় গ্রুপ ব্যবহার করতো। গ্রুপগুলোতে তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নামে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য প্রদান করে বিভিন্ন প্রকার প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) আগে প্রকাশ করে দেয় (যা বেশিরভাগ সময় বানোয়াট ও মিথ্যা)। যার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলনের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে রাস্তা দখল করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতো। তালিকাভুক্ত কোম্পানীতে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা দাবি করতো। চাঁদা না দিলে ঐসব কোম্পানী সম্পর্কে অনলাইনে অপপ্রচার শুরু করতো। এমনকি কোম্পানীর অফিসগুলোতেও হামলা করতো। গ্রেফতারকৃতরা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো এবং এসব করার জন্য গোপনীয় হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করতো। এসব গ্রুপের সদস্যদের একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে গ্রুপে যুক্ত হতে হতো। আবার শেয়ারে প্রফিট হলে লভ্যাংশের অংশ তাদেরকে দিতে হতো। লোকসান হলে তারা দায়িত্ব নিতো না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন অনুযায়ী যেকোন শেয়ারের মূল্য নিয়ে তথ্য আদান-প্রদান সম্পন্ন অবৈধ।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বদা কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়মিত মনিটরিং এবং সাইবার পেট্রোলিং করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উস্কানি দিয়ে কেউ যাতে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সে বিষয়ে অভিযান চলমান রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দমন আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।