এড.লুৎফর রহমান শাওন, ব্যুরো চীফ-শেরপুরঃ সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, যা হবে বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং সত্য নির্ভর। কিন্তু বর্তমানে নামে/বেনামে হলুদ সাংবাদিকতায় ছেয়ে গেছে সারা বাংলা, অসচেতনতায় কখন যে এটা আদালত অবমাননায় রুপ নেয় সেটার খেয়াল থাকে না ।কিন্তু প্রকৃত সাংবাদিক হতে হলে অবশ্যই আদালত অবমাননার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। জানতে হবে আদালত অবমাননা আইন।আমাদের দেশের মতো ভারত ও পাকিস্তানেও একই আইন প্রচলিত ছিল। প্রথমে ২০০৮ সালে আদালত অবমাননা অধ্যাদেশ এবং পরে ২০১৩ সালে আদালত অবমাননা আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আদালত অবমাননা আইনটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন, যার ফলে ২০২২ সালের নভেম্বরে আদালত অবমাননা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আদালতের কোনো স্থাগিতাদেশ না থাকায় আদালত অবমাননা আইন, ১৯২৬ বহাল থেকে যায়।আদালত অবমাননা আইন ১৯২৬, এই আইন অনুযায়ী বিচারাধীন মামলার নিরপেক্ষ বিচারকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে কোনো প্রকাশনা প্রকাশিত হলে তা আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় মন্তব্য যদি দায়িত্বহীনভাবে নিরপেক্ষ সমালোচনার সীমা অতিক্রম করে এবং নির্দেশিত ও পরিকল্পিত পন্থায় বিচারকাজের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বিনষ্ট করে এবং বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে বিচারকদের বাধাগ্রস্ত করে এবং মৌলিক অধিকার বলবৎ করার পথে বাধা প্রদান করে বা সংবিধান পরিপন্থী কর্মের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করে, তবে তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। যদি কোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিকে আক্রমণ করে অযৌক্তিকভাবে কোনো প্রবন্ধ লেখে ও প্রকাশ করে তাহলে সে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী হবে। যদি দেখা যায় যে প্রবন্ধটি আদালতের মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাহলে তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। তবে, জনস্বার্থে বিচার কার্যের নিরপেক্ষ ও যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা আদালত অবমাননা নয়। তাছাড়াও ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৯ (ক) (খ) (গ) (ঘ) (ঙ) (চ) ধারায় সংবাদপত্র বিষয়ে সরকারকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতামূলক বা বিদ্রোহের উসকানিমূলক বা মারাত্মক শিষ্টাচারহীন বা গালি গালাজপূর্ণ বা অশ্লীল, অথবা কোন শব্দ বা দৃশ্যমান তিরস্কার নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী বা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞামূলক কোনো লেখা যদি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, তবে সরকার তার প্রত্যেকটি কপি বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং যে স্থানে ঐগুলি থাকে সেই স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের পরওয়ানামূলে পুলিশ যেতে পারে; তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এ বিষয়টি হাইকোর্ট বিভাগের গোচরে আনতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৮ ধারায় বলা হয়েছে যে ম্যাজিস্ট্রেট সেইসব ব্যক্তিকে মুচলেকা দেবার আদেশ দিতে পারেন যারা রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক বা শ্রেণীর সংঘর্ষ সৃষ্টিকারক বা বিচারককে ভীতি প্রর্দশনমূলক বা অবমাননাকর কোনো কিছু প্রকাশ করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিককে তার নির্দেশিত স্থানে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।আদালত অবমাননা আইন, ১৯২৬ এই আইন অনুযায়ীআদালত অবমাননাকারীর শাস্তি হিসেবে কারাদন্ড, যার মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে অথবা জরিমানা, যার পরিমাণ দুই হাজার টাকা হতে পারে অথবা উভয়ই। ক্ষমা প্রার্থনা করলে অবমাননার আসামীকে মুক্তি দেওয়া যায়।১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ২২৮ ধারামতে, কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমের যেকোনো পর্যায়ে দায়িত্বপালনকালে কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে (দায়িত্বরত ব্যক্তিকে) ‘অপমান’ করেন বা কাজে বাধা দেন, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমাণ অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়াও ফৌজদারি আইনের ৪৮০ ধরার বিধান অনুসারে, বিচারকার্য সমাপ্তির পূর্বে আদালতের সামনে ‘অবমাননা’ ঘটলে অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারেন।