শাহীন আহমেদ
ভারী বর্ষণে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ এলাকা। রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় অনেক সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।এবং নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা ভারী বর্ষণে নগরের সড়ক ও অলিগলি হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বাড়তে পাড়ে বৃষ্টিপাত। সঙ্গে রয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা।
যত দূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানি। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে নগরীর অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক—সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি, জলজট এবং ভাঙা সড়কে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চট্টগ্রামবাসীর অভিযোগ, সড়ক সংস্কারে গাফিলতি, খাল ও ড্রেন ঠিকমতো পরিষ্কার না করার কারণে এমন জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
আজ সকালের ভারী বর্ষণে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। দুপুরে বৃষ্টি থামলেও পানি নামেনি।
সকালের বৃষ্টিতে নগরের হালিশহর, সিডিএ আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা, মুরাদপুর, চকবাজার, ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, একে খান ইস্পাহানি গেট এলাকায় সহ জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় এবং নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে অনেক এলাকা ও রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, যানবাহন সংকটের কারণে তারা পড়েছেন বিপাকে। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের দোকানপাটে কিংবা ছাউনিতে। যদিও এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানপাটেও ঢুকে পড়েছে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে অনেক বাসাবাড়িতে। অনেককেই দেখা গেছে বালতি-গামলা দিয়ে পানি বের করতে। কেউ কেউ পাম্প দিয়ে পানি বের করছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে নগরীর ক্ষতবিক্ষত সড়কগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয়। এবারও গত ১৫ জুলাই থেকে নগরীর প্রায় ৪২ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত ১৬ জুলাই থেকে কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভাঙা সড়ক মেরামতের কাজ করা সম্ভব হয়নি। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বৃষ্টিপাত শুরুর আগেই নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কোটা আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তা বাধাগ্রস্ত হয়। তবে যতটুকু সড়ক নষ্ট হয়েছিল তার ২৫ শতাংশ ঠিক করা সম্ভব হয়েছিল। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা সড়ক মেরামত কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা ফজলে হোসেন দৈনিক চৌকস পত্রিকা কে বলেন, আমাদের এলাকা কোমর সমান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ। পায়ে হেঁটেও মানুষ চলাচল করতে পারছে না। অনেক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিচ তলায় পানি ঢুকে গেছে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে গত কয়েকদিন ব্যবসা ভালো যায়নি। এখন জলাবদ্ধতার কারণে কেনাবেচা বন্ধ।
এদিকে, আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে প্রায় ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা অতিভারি বর্ষণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে এমন বৃষ্টিপাত। ফলে আগামী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে সমুদ্রবন্দরকে দেখানো হয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত।