হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া, ঘোষবাগ, নরসিংহপুর ও ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইলসহ এলাকায় কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন গ্রæপের সাথে বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
রবিবার ( ২ অক্টোবর ২০২৩ইং) সকাল ১০ টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া ও ভাদাইল এলাকার সবচেয়ে বড় (ক্রাইম জোন এলাকা রূপায়ন আবাসন-১ এর ভেতরে ২০-২৫ জনের কিশোর গ্যাং) দেশীয় অস্ত্র চাকু ছুরি ও দা নিয়ে মহরা দিতে দেখে লোকজন, এই কিশোর গ্যাং আতংকে পুরো এলাকাজুড়ে। গত শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের সময় জামগড়া মোল্লাবাড়ি মসজিদে নামাজে আসা স্কুল ছাত্র শরিফুল ইসলামকে কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীরা মারপিট করে তার মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে। এ বিষয়ে ভিকটিম শরিফুলের বাবা গোলাম মোস্তফা কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীদের ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় মামলা করার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন, অথচ দুইদিন না যেতেই তার অভিযোগ তুলে নিতে বাহিনীর লিডার কর্তৃক হুমকি প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে যেকোনো সময় দুই গ্রæপের বড় ধরণের সংঘর্ষ হতে পারে বলে অনেকেই জানান।
অন্যদিকে কিশোর গ্যাং বাহিনীর আরো একটি হামলার ঘটনায় গত (১৩ আগস্ট ২০২৩ইং) তারিখ রাতে একটি গ্রæপের পক্ষে মামলা করার জন্য আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন লুৎফর সরকারের ছেলে রবিন সরকার (২১)। ওইদিন রবিবার (১৪ আগস্ট ২০২৩ইং) সকালে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জিরাবো আনন্দ বাজার, কুন্ডলবাগ এলাকার স্থানীয় বিপ্লব এর ছেলে রাকিব (২২) ও রবিন (২১) এই দুই গ্রæপের সাথে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা এবং ক্ষমতা বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে তার দুইদিন আগে। এই ঘটনা নিয়ে ৩য় পক্ষ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীসহ পুলিশ ও র্যাবকে নিয়ে গালিগালাজ করার অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে কিছু সংবাদকর্মীদের ভিডিও করে রেখে তারা বিভিন্ন হুমকি প্রদান করছে। উক্ত এলাকায় প্রায় শতাধিক কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসী সক্রিয় ভাবে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ফিটিংবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর হামলা ও মারপিট করা হয়।
উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান শাহেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আওয়ামীলীগ সরকার জঙ্গি দমন করেছে। আশুলিয়ায় এখন কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। তারা প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা এবং ক্ষমতা বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ সংঘটিত করছে, এতে আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে কারো কোনো ছাড় দেয়া যাবেনা, সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই আওয়ামীলীগ নেতা।
এর আগে আশুলিয়ার নরসিংহপুর ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আবু সামার মার্কেটে কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীদের হামলাসহ ধারাবাহিক ভাবে বেড়েই চলেছে কিশোর অপরাধ। চাঁদাবাজ, অপহরণকারী কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীদের সাথে জড়িত কারা? পুলিশ কেন তাদেরকে গ্রেফতার করছেন না বলে সচেতন মহলের প্রশ্ন। কিশোর গ্যাং এর ধারাবাহিক হামলা ও চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে, এতে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল।
গত (৫ আগস্ট ২০২৩ইং) আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং, ৫নং ও ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড করেছে কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীরা। এর আগে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া হেয়ন গার্মেন্টস রোডে বকুল ভুঁইয়ার বাড়ি এবং ভুঁইয়া পাড়া, ফকিরবাড়ি ও ভাদাইলের আশপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাস বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী-ধারাবাহিক ভাবে হামলায় ভাংচুর ও অপহরণ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যরা, তারা প্রায়ই অপহরণ-খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাÐ করে। এইসব অপরাধীদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা কারা? পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবকে জানানো হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে এসব অপরাধীরা প্রকাশ্যে অপরাধ করছে বলে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান।
র্যাব-৪ জানায়, গত (১৮ মে ২০২৩ইং) তারিখে বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন শ্রীপুর মোজারমিল এলাকার একটি পুকুর থেকে এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ভিকটিম মোঃ ফারাবী আহমেদ হৃদয় (২১) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র, সে স্থানীয় মোঃ ফজলুল হক মিয়ার বড় ছেলে। গত ৮মে ২০২৩ইং জামগড়া নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে ভিকটিম হৃদয় নিখোঁজ ছিলেন। জানা যায়, কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসী মোঃ ময়েজ হোসেন পরাণ (২২)সহ ৪-৫ জন তাকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে না পেয়ে তাকে হত্যা করে, পরে জানা যায়, ভিকটিমের পরিবারের কাছে টাকা চাওয়ার আগেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। অপহরণের দিনই বিকালে হৃদয়কে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য বস্তাবন্দি করে শ্রীপুর এলাকায় নিয়ে একটি পুকুরে ফেলে দেয় তারা, দুইদিন পর লাশ ভেসে উঠলে আবার তারা ৮টি ইট বস্তার ভেতরে দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়, যাতে লাশ না দেখা যায়।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অমিতাভ চৌধুরী অমিত বলেন, কিশোর গ্যাং সবখানে আছে, তবে আশুলিয়ার জামগড়া ও রূপায়নে অনেক বেশি, মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদের সামনে গত শুক্রবার শরিফুল ইসলামের উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করছি, ভুক্তভোগী পরিবার গরীব, ছেলেটার মাথায় কুপিয়েছে কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীরা, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। একই এলাকায় মা বাবা ও ছেলেসহ একই পরিবারের ৩জনকে জবাই করে হত্যা ও ভাদাইলে আজিজুল নামের এক যুবককে ৪ রাউন্ড গুলি করেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ বাপ্পি রাজ। এসব ঘটনায় আশুলিলয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে বলে পুলিশ স্বীকার করে। পুলিশ ও র্যাব বলছেন, আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি যাতে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয় সেই ভাবে কাজ করছি, অপরাধীদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তারা জানান।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আল মামুন ও র্যাব-৪ এর সদস্যরা জানান, অপরাধী দেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে, অপরাধী সে যেইহোক না কেন কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে পুলিশ ও র্যাব জানায়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম, নিবার্হী সম্পাদকঃ দেওয়ান ওমর ফারুক
সহ-সম্পাদকঃ জাহিদ হোসেন সজল, সহ-সম্পাদকঃ মোঃ আবুল কাশেম
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা), মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০, রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন, চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০.
ফোনঃ+8802226639847, মোবাইলঃ 01716127811, 01678741000, 01711280916, ইমেইলঃ choukasinfo21@gmail.com