বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকা জেলার আশুলিয়ার ইয়ারপুর গ্রামের প্রবাসী হযরত আলী’র স্ত্রীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে দিবালোকে বাড়ি ঘর ভাংচুরের ঘটনার পর জমি দখলের চেষ্টা স্থানীয় মোল্লা নাজিম উদ্দিন (৪১) এর বিরুদ্ধে। প্রবাসীর স্ত্রী মোছাঃ ইয়াসমিন (৪১) ও বড় ছেলে পুলিশ সদস্য আলামিন (২২) এর বয়স ২৫ দিয়ে এবং ছোট ছেলে এসএসসির পরীক্ষার্থী আশরাফুল (১৬) এর বয়স ২০ দিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়েছে নাজিম মোল্লা। সূত্রঃ সি. আর. মামলা নং ৮৩২/২০২৩। ধারাঃ ১৪৩/৪৪৭/ ১০৯/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬। সরেজমিনে এলাকাবাসী অনেকেই বলেন, নাজিম মোল্লা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মামলা করেছে, আসল কাহিনী হলো একটি জমি দখল।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি ২০২৪ইং) আশুলিয়ার ইয়ারপুরের হযরত আলী প্রবাসীর ছেলে পুলিশ সদস্য আলামিন ও এসএসসির পরীক্ষার্থী আশরাফুল ইসলামের মা ইয়াছমিন গণমাধ্যমকে বলেন, আশুলিয়ার “ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র ভাই নাজিম উদ্দিন মোল্লা নাজি (৪১) পিতা— মৃত মান্নান মোল্লা। এই নাজিম আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে আমাদের উপর হামলা চালায় এবং মারপিট করেছে। আমার স্বামী বিদেশ থাকে প্রবাসীর স্ত্রী আমি, আমার বড় ছেলে আলামিন পুলিশ সদস্য ডিউটিরত অবস্থায় এবং ছোট ছেলে আশরাফুল নাবালক ছেছে এসএসসির পরীক্ষার্থী, আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে, সেই সাথে আমাদের সম্মানহানী করছে, আমরা এই মামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত দাবী করছি, দোষীদের আটক করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী করছি।
ভুক্তভোগী ইয়াসমিন আরও বলেন, এর আগে নাজিম ও মিয়াজ উদ্দিন, পিতা—মৃত কিতাব আলী এবং আব্দুল জলিল (৫০), পিতা—মৃত আঃ জব্বার, সর্ব সাং—ইয়ারপুর, থানা—আশুলিয়া, জেলা ঢাকাগণ একটি জমিতে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি, দলিলের নাম্বার ভুল করায় সেই জমি অবৈধভাবে দখলের পায়তারা করিতেছে তারা, আমরা বাধা দেয়ায় তারা আমাদের জমি দখল করতে পারে নাই শুধ দেউয়াল তৈরি করেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং দুপুরে নাজিম ও তার লোকজন আমাকে খারাপ ভাষায় অনেক গালিগালাজ করে মামলার ভয় ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে, তারা আমাকে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে, আমার প্রশ্ন: আদালতে মামলা চলাকালে জমি দখল করা ও আমাকে হুমকি দেয়া কি অপরাধ নয়, তাই যদি হয় আমি এর সঠিক বিচার চাই। এর আগে গত (৫ এপ্রিল ২০২৩ইং) সকাল ১০টার দিকে আমাকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে মামলার আসামীরা, এর পরের দিন (৬ এপ্রিল ২০২৩ইং) উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুরা গায়ের জোরে যা ইচ্ছা তাই করে, আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কা করেনা তারা, উক্ত বিরোধের জের ধরিয়া অদ্য ইং গত ০৬/০৪/২০২৩ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উল্লেখিত বিবাদী আসামীগণ তাহাদের সঙ্গে আরো ১০—১২ জন সন্ত্রাসী সহযোগীসহ দা, শাবল,হাতুরী, লোহার রড ইত্যাদি অস্ত্র—সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করিয়া বাড়ির পূর্ব ভিটিতে থাকা তিন রুম বিশিষ্ট ওয়াল কাম টিনশেড বিল্ডিং ভাংচুর করে। এতে আমার অনুমান ১,৫০,০০০/ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। তখন আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিলে ১নং বিবাদী আসামী নাজিম উদ্দিন মোল্লা নাজি আমাকে চুল ধরিয়া মাটিতে ফেলিয়া আমাকে কিল—ঘুষি ও লাথি মারিয়া আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা,ফুলা জখম করে, আমি তার মারধর ঠেকাইতে গেলে তার মুখে আঘাত পেয়েছে, এটা প্রমানিত। বিবাদী আসামী আঃ জলিল আমার ঘরে থাকা আলমারী হইতে নগদ—৭০ হাজার টাকা এবং বিবাদী আসামী মিয়াজ উদ্দিন আমার আলমারী হইতে অনুমান ০২ ভরি ওজনের বিদেশী স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে, যাহার মূল্য অনুমান ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে। বিবাদী আসামিরা আমার ঘরের বারান্দার গ্রীল ভাঙ্গীয়া নিয়া গিয়েছে, যাহার মূল্য অনুমান ২৫,০০০/ টাকা। আমাদের ডাক চিৎকার শুনিয়া আশে—পাশের লোকজন আগাইয়া আসিতে থাকিলে বিবাদী আসামিরা যাওয়ার সময় এই বলিয়া হুমকি দিয়া গিয়াছে যে, তাহারা যেকোনো সময় আমাদের জমি, বাড়ি ঘর দখল করিয়া নিবে এবং উল্টো মামলা দিবে। তাহাদেরকে বাধা দিলে আমাকে ও আমার পুত্র ছেলেদেরকে খুন করিয়া ফেলিবে। তিনি আরও বলেন, আমার এক ছেলে আল—আমিন বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য, সে মিরপুরে ডিএমপিতে চাকরিরত আছে। আমার ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, দুই ছেলের কিছু হলে এর জন্য দায়ি থাকিবে উক্ত আসামীরা। এই ঘটনায় আমার পরিবারের লোকজন বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এর সঠিক বিচার চাই এবং পুলিশ ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি, দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন, তাই ঢাকা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেছি, মামলা নং ৬০/২০২৩।
অন্য এক অভিযোগকারী সাদিয়া আক্তার শিল্পী (২১), পিতা মোঃ মোকছেদ আলী, সাং—ইয়ারপুর, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা বলেন, বিবাদী ১। আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ—নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রার্থী ছিলেন মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র ভাই মোঃ নাজিম উদ্দিন মোল্লা (৪০), পিতা—মৃত মুন্নু মোল্লা, আরো ১০—১২ জন বিবাদীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি যে, আশুলিয়া থানাধীন মনসন্তোষ মৌজাস্থ জমি যাহার সি এস ২১০, আর এস ৪৬০, ৪৬২, বি আর এস ৭৬৫৭, ৭৬৫৮, দাগে আমাদের জমির পরিমাণ ২৪ শতাংশ ইহার কাতে ২৪শতাংশ জমি বিগত ১৯৮৬ সাল হইতে আমরা ক্রয় সূত্রে মালিক হইয়া উক্ত জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করিয়া আসিতেছি। বিবাদীগন এলাকার ভূমিদস্যু ও জমি দখলদার। বিবাদীগন ১০ বছর পূর্ব হইতে আমাদের উক্ত জায়গা জোরপূর্বক জবর দখল করার পায়তারা করিয়া আসিতেছে। অদ্য গত ইং ০৬/০৪/২০২৩ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিবাদীগনসহ তাহার সহযোগী আরো ১০—১২জন বিবাদীগন আমাদের বাসা বাড়ির পাশে আসিয়া আমার বাবার নাম ধরিয়া গালি গালাজ করিতে থাকে, তখন আমি বিবাদীদেরকে গালিগালাজ করিতে নিষেধ করিলে ১নং বিবাদীসহ সকল বিবাদীগন আমাকে মারপিট করার জন্য বে—আইনী জনতাবদ্ধ অনাধিকার ভাবে আমাদের উক্ত বাড়ি ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়া দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া লাঠি শোডা, দা, চাইনিজ কুড়াল, নিয়া বাড়িঘরের ওয়াল, জানালা, দরজা, চালের টিন বাইরাইয়া ও কুবাইয়া ব্যাপক ভাংচুর করিয়া অনুমান প্রায় ১০,০০,০০০/= টাকার ক্ষতি সাধন করে। এর আগে বিবাদীগন আমাদের বিরুদ্ধে সি আর মামলা দায়ের করেন, যাহার মামলা নং—৫৪৩/২০১০। উক্ত মামলা আমাদের পক্ষে রায় হওয়া সত্ত্বেও বিবাদীগন কোর্টের আইন অমান্য করিয়া আমাদের উক্ত জায়গা জমি আবারও দখল করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রহিয়াছেন, সঠিক তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতারসহ কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
নাজিম উদ্দিন মোল্লা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি থেকে সরে যাওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নিয়েছে ইয়াছমিন এর স্বামী হযরত আলী। টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন তিনি, সেই অর্থে কাগজপত্রে এক লাখ টাকা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও বিষয়টি রহস্যজনক। উক্ত বিষয়ে দুই পক্ষ আদালতে প্রায় ১০—১২ বছর দৌড়ঝাপ করেছেন মামলা নিয়ে। বর্তমানে আদালতে একাধিক মামলা চলমান। পর্ব—১।