ঢাকার আশুলিয়ায় ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন ঘটনায় পৃথকস্থান থেকে ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে থেকে শনিবার রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আশুলিয়ার বাইপাইল, পলাশবাড়ী, জামগড়া ছয়তলা, কান্দাইল ও কাঠগড়া পশ্চিমপাড়া থেকে মরদেহ গুলো উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলো- কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার দিয়া ডাঙ্গা গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়ে রিয়া মনি (১৮), দিনাজপুর জেলার সদর থানার মামুদপুর গ্রামের মোঃ মইনুল রহমানের ছেলে মোঃ মঞ্জরুল (২২), গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার উত্তর হরিপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে মাসুদ (৩২), বগুড়া জেলার শেরপুর থানার কাজর খামারকান্দি এলাকার মাসুম আলীর স্ত্রী সুস্মিতা খাতুন (২৩), টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার ইসপিনজারপুর এলাকার মোঃ হাবুল মিয়ার মেয়ে মোছাঃ সুরমা আক্তার (২০) ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর থানার রামখেরা গ্রামের সাচ্চু মিয়ার মেয়ে নুপুর (১৬)।
শনিবার (১৮ মে) বিকেল ৫ টার দিকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে রিয়া মনি (১৮) এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় নিজের ভাড়াবাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে স্থানীয় তাকে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্ব চিকিৎসা তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব সাহা বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সাথে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে শনিবার বিকেল ৩ টার আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ের উত্তরবঙ্গ মুখী কাউন্টারের সামনে থেকে মোঃ মঞ্জরুল (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মোঃ মঞ্জরুল (২২) ডিপজল বাস কাউন্টারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতালেব বলেন, যাত্রী নিয়ে টানাটানির জেরে মারামারির ঘটনায় এক কাউন্টার সহযোগীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে আটককৃতের বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারেননি তিনি।
এর আগে শনিবার দুপুরে আশুলিয়ার বাইপাইল মোড় এলাকার পেয়ারলেস হাসপাতালে সামনে থেকে মাসুদ নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, স্টোকজনিত কারনে মাসুদের মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার ভোর রাতে আশুলিয়ার কান্দাইল পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে সুস্মিতা খাতুন নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত নুপুরে স্বামী মাসুম আলী জানায়, তার স্ত্রী ছোট বেলা থেকেই মানুষিক ভারসাম্যহীন ছিল। গত ৮ রমজান তার বাবা বাসা থেকে বের হয়ে গেলে তার ভারসাম্যহীনতা আরও বেরে যায়। তার বাবাকে এর পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে।
এর আগে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার সরকার মার্কেট এলাকার নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল থেকে মোছাঃ সুরমা আক্তার (২০) নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বদিউজ্জামান বলেন, নিহত সুরমা আক্তার শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। তার পরিবারের ধারণ এ কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় সুরমা আক্তারের মরদেহ তার স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়াও শুক্রবার বিকেলে আশুলিয়ার কাঠগড়া পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে নুপুর (১৬) নামে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত নুপুরের মামা সুজন বলেন, নুপুর আমার বোনের মেয়ে। তার বাবা মা পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। নুপুর দুই ভাই বোনকে দেখা করার জন্য বাসাতেই থাকতো। পার্শ্ববর্তী মুদী দোকানদার সুজনের দোকানে প্রায়ই যেতো নুপুর। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে সুজন নুপুরকে বিয়ে করবে না বলে জানায়। সুজনের এমন খবর পেয়ে আমার ভাগনি গতকাল বিকেলে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সুজন পলাতক রয়েছে। এরপর থেকে আশুলিয়ায় থানায় ঘোরাঘুরি করেও মামলা নেয়নি পুলিশ। আজ ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিয়ে আমরা গ্রামে যাচ্ছি। আগামীকাল আমরা কোর্টে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জোহাব আলী বলেন, সে তো আত্মহত্যা করেছে, আমরা অপমৃত্যু মামলা নিয়েছি। গতকাল থেকে ভুক্তভোগী পরিবার মামলা দেওয়ার জন্য ঘোরাঘুরি করলেও মামলা না নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।