সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বেশির ভাগ বাড়িতে এক সময় হালচাষের বলদ গরু দেখা যেত। সে সময় জমি চাষের ঐতিহ্যবাহী একটি পদ্ধতি ছিল বলদ গরু-মহিষ, জোয়াল ও লাঙল মই দিয়ে জমি চাষ।এই পদ্ধতিতে লাঙলের ফলা জমির গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করত। গরুর পায়ের কারণে জমিতে কাদা হতো অনেক বেশি এবং গরুর গোবর জমিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ত।কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যটি। জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো সামান্য টিকে আছে গরু দিয়ে হালচাষ। কিন্তু আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই চিরচেনা দৃশ্যটি।বর্তমানে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে।বাপ-দাদার আমলে দেখা যেত কাক ডাকা ভোরে কৃষক গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল মই নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়ত। এখন এ দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ।কলকলিয়া ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের আজাদ মিয়া তালুকদার বলেন, ৯০ দশকেও আমার বাড়িতে তিন জোড়া হালের বলদ গুরু ছিল। তখন জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলার ছিল না। গরু দিয়ে জমি চাষ করলে জমি উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি হয়। চাষের সময় জমিতে গোবর পড়ে জমিতে মিশে যায়। এতে রাসায়নিক সার কম লাগত।তিনি বলেন, জমি এখনো ঠিকই আছে। তবে হালের বলদ গুরু গুলো আর নেই। সময়ের ব্যবধানে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি আসায় লাঙল-গুরুর ব্যবহার আর নেই।কাদিপুর গ্রামের জিলু মিয়া বলেন, গরুর লাঙল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ আরও গভীর হয়। এতে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদে সার, কীটনাশক কম লাগত। তবে, দিনে দিনে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ বলেন, গরু-মহিষ, লাঙল, জোয়াল মই ছিল পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পুরোনো চাষ পদ্ধতিকে আমূল পরিবর্তন করেছে।