এম.এম কামালঃ খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেছেন, চূড়ান্ত বিজয় এখনো আসেনি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদেরকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সকল প্রকার দুর্নীতি, জুলুম ও অবিচার মূলোৎপাটনে আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাতে চাই, যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা আরো দৃশ্যমান করুন। প্রশাসনিক সংস্কার সহ সকল সংস্কারে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত প্রাধান্য দিন। বিশেষ করে শিক্ষা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনে ইসলামী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিন। এখানে ইসলাম বিরোধী কোন অপতৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না। আগুন সন্ত্রাস সহ সকল নাশকতা রুখে দিতে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা সমূহের নিরাপত্তা জোরদার করুন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। বিডিআর হত্যাকান্ড, শাপলা চত্তরের গণহত্যা সহ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করুন। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিং জোরদারের উদ্যোগ নিন। পাচারকৃত সকল অর্থ ফিরিয়ে আনুন। ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন কমিয়ে আনুন। ২০২৫ এর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অব্যাহত আধিপত্যবাদি আচরণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজও হুমকীর সম্মুখীন। হাজার হাজার শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। এই মুহূর্তে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। আজকের এই অধিবেশন থেকে দেশপ্রেমিক সকল দলের প্রতি আমরা ঐক্যের আহবান জানাচ্ছি।
এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হলে দেশের সর্বস্তরে সংস্কার প্রয়োজন। আমূল সংস্কারের জন্য খেলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জগতসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ একমাত্র মানুষকে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। একটি সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হলে রাষ্ট্রে আল্লাহর রবুবিয়্যাত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। শ্রষ্টার দেওয়া ম্যানুয়ালই সৃষ্টিকে স্বাচ্ছন্দ্যে চালিত করে। মানুষকে জানতে হবে আল্লাহর হুকুম মানার মধ্যে কত শান্তি। ইসলামের আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হলে বৈষম্য থাকবে না, দারিদ্র্য থাকবে না, জুলুম থাকবে না, অবিচার থাকবে না, রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এই জন্য খলিফার মর্যাদাপূর্ণ মানুষগুলোকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে হবে।
খেলাফত মজলিস ঈমান ও আমলে সালেহর অধিকারী একদল যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর একদল যোগ্য জনগোষ্ঠী বিনির্মাণে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় গঠনতান্ত্রিক অনুষ্ঠান যা একদল যোগ্য লোকের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। আজকের এই অধিবেশনের মধ্য দিয়ে ইসলামী আদর্শের আলোকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলন আরো জোরদার হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। আজ খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার ২৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অধিবেশন উদ্বোধন করেন সাবেক আমীর ও বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাসউদ খান, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা: শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, খেলাফত মজলিস নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ, অধ্যাপক সিরাজুল হক, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতি সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপা সভাপতি রাশেদ প্রধান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাজারো আলেমকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদেরকে মানুষই মনে করেনি। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকষ দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। শাপলা চত্ত¡রে আলেমদেরকে হত্যা করেছে। সবাইকে এই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একটা দু:সময় আমরা পার করেছি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন। বিগত ১৬ বছর আমাদের কেউ বাড়ীতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। হামলা-মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ভারত পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সাথে তামাশা করছে। একঘরে আগুন লাগলে যেমন পাশের ঘর নিরাপদ থাকে না, বাংলাদেশের কিছু হলে ভারতও নিরাপদ থাকবে না। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির সমন্বয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামীলীগ মূলত ভারতের সরকার ছিল। ভারতের স্বার্থ ছাড়া তারা দ্বারা দেশের কোন কল্যাণ হয়নি। জনগণের মতামত তোয়াক্কা না করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হয়নি। দেশ রক্ষা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও অধ্যাপক আবদুল জলিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিস যুগ্ম মহাসচিব এবিএম সিরাজুল মামুন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, ডা: আখলাক আহমদ, আলহাজ¦ সদরুজ্জামান খান, ছরছিনা দরবারের বড় হুজুর মাওলানা শাহ মো: সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী, আঞ্জুমানে হেফাত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা আবদুস সবুর, বরুণা মাদ্রাসার পরিচালক শায়েখ বদরুল আলম হামিদী, বিশিষ্ট আলেম দ্বীন মাওলানা আবদুস সামাদ, মুফতি আলী হাসান উসামা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ.ক.ম ইউনুস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব মোর্শেদ, অধ্যাপক কেএম মাহবুব আলম, খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি রায়হান আলী, ইসলামী যুব মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, শ্রমিক মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রভাষক আবদুল করিম, খেলাফত মজলিস যুক্তরাষ্ট্র শাখা সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম, যুক্তরাজ্য তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. শেখ মোস্তাক আহমদ, জেদ্দা মহানগরী সভাপতি মাওলানা আবদুল মুকিত, মদীনা মনোওয়ারা সভাপতি মাওলানা জালালুদ্দিন, কাতার শাখার উপদেষ্টা মাওলানা লোকমান আহমদ, মালয়েশিয়া সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রব, আরব আমিরাতা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালেদ আহমদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আবু আফফান ওসমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক খেলাফত মজলিস প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু।