এম.এম কামালঃ চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জাহাজের সেভেন মার্ডারের মাষ্টার মাইন্ড ইরফানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। তাকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা র্যাব-১১ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
২৫ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর সাড়ে ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে তিনি দাবি করেন। মূলত জাহাজটির মাস্টার গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘ ৮ মাস ধরে ইরফানকে কোনো প্রকার বেতন ভাতা দিতেন না এমনকি তিনি দুর্ব্যবহারও করতে। এসবের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান চেতনানাশক ঘুমের ট্যাবলেট খায়িয়ে সবাইকে হত্যা করেন।
তিনি আরও বলেন, ইরফানই জাহাজের ৯ম ব্যাক্তি। সবাইকে ঘুমের মধ্যে হত্যাকান্ড ঘটানোর পর থেকে ইরফান পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। জাহাজ থেকে উদ্ধারকৃত রক্তমাখা চাইনিজ কুড়ালের ফিঙ্গার প্রিন্টসহ যাবতীয় তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে সারবহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাতজন খুনের ঘটনায় অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামী করে হাইমচর থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। লাইটার জাহাজ মালিকদের পক্ষে মো. মাহাবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। মাহবুব মোরশেদের বাড়ি ঢাকার দোহার এলাকায়।
চাঁদপুরের নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলছেন, মামলায় খুন ও ডাকাতির অভিযোগ এনে তা চাঁদপুর সদরের হরিণাঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই জাহাজটি থেকে একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি চাকু, দুটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ ও নগদ ৮ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।
তিনি বলেন, গত সোমবার চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝেরচরে মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজ থেকে পাঁচ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গুরুতর আহত দুইজন হাসপাতালে মারা যায় এবং আরও একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ পৃথকভাবে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে এরিমধ্যে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তিনি আরও বলেন, খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন- সুকানি জুয়েল।
স্থানীয়রা বলছে, মনিপুর টেক জায়গাটিতে এর আগেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সে সব ঘটনায় এমন নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকান্ড নেই। তবে নৌপথের ওই রুটটি অনেকটাই অনিরাপদ। তবুও এখান দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করছে। তাই দ্রুত রহস্য উন্মোচন হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত জাহাজটিতে পাইলট ছিলোনা। এমনকি তাতে স্কট, সিসি ক্যামেরা, ভিএইচএফ যন্ত্রপাতিও ছিলোনা। সেক্ষেত্রে জাহাজটি কিভাবে এতোদিন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নদীতে চলাচল করেছে? সে নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দুষছেন অনেকে।
যদিও অবৈধ রেজিষ্ট্রেশনবিহীন কার্গো জাহাজের বিরুদ্ধে প্রায়ই জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান পরিবহনের চাঁদপুর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শ. আ. মাহফুজ উল আলম মোল্লা। তিনি বলেন, ঘটনার খবর শুনেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পরে দেখলাম জাহাজটি নোঙ্গর করা ছিলোনা বরং চরে আটকে ছিলো। ওটাতে পাইলটও ছিলোনা। যার কারনে নির্দিষ্ট কেনেলের বাইরে দেখতে পাই জাহাজটি। ওই জাহাজটির আকার অনুযায়ী কমপক্ষে ১২ জন থাকার কথা কিন্তু তার তথ্য না পেয়েই সন্দেহ হয়েছিলো। যাক দ্রুত সময়ে রহস্য উদঘাটন হওয়ায় ভালো লাগছে।
এদিকে মামলার পর পরই আসামী গ্রেফতার হওয়ায় বিষয়টি ভালোভাবে নিয়ে দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়েছেন শত শত নেতাকর্মী নিয়ে ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান ধর্মঘট ডাক দেয়ার আল্টিমেটাম দেয়া নৌযান শ্রমিক ফেডারশনের নেতা মোঃ হারুন। তিনি বলেন, রহস্য উদঘাটিত হলেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও যারা নিহত হয়েছেন প্রত্যেককে ২০ লক্ষ টাকা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদি দাফন এবং প্রতিটি জাহাজের নিরাপত্তার দাবী জানাচ্ছি।