এম.এম কামালঃ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. মো. আইয়ুব মিয়া বলেছেন, জনবান্ধব ও সুশাসনের জন্য সরকারি প্রশাসনের কাজের রোল মডেল চাঁদপুর থেকেই শুরু হোক। রাতারাতি কোনো পরিবর্তন করা যাবে না ঠিক, তবে সবার সহযোগিতা পেলে এবং বিভিন্নজনের মতামত সংস্কার কমিশন সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে তুলে ধরবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তা, বিশিষ্টজন, ছাত্র প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আইয়ুব মিয়া বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কেনো এ চাঁদপুর থেকে শুরু হওয়ার কথা বলা হলো- তার কারণ হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের পর থেকে এ জেলায় একটা স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতার চিত্র পাওয়া গেছে। পদ্মা ও মেঘনায় অবৈধ বালু মহাল ও তদবির বন্ধ এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নতি। এটা জেলা প্রশাসক তথা গোটা প্রশাসনযন্ত্র কঠোর অবস্থানের কারণে সম্ভব হয়েছে। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতা না থাকলে তা কিছুইতে সম্ভব হতো না।
ড. মো. আইয়ুব মিয়া বলেন, জনপ্রশাসনে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের দরজা সবসময় তৃণমূলের মানুষের জন্য খোলা রাখতে হবে। একই সঙ্গে রাজনীতির চাপমুক্ত হলে প্রশাসন তখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অপর সদস্য ড. মো. হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেকগুলো উপাদান জড়িত। এসবের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। আবার নতুন করে কেউ যেন স্বৈরাচারী না হতে পারে, সে বিষয়েও আমাদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে এমন মতবিনিময় করে স্থানীয়দের মতামতগুলো সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে তুলে ধরব।
একই মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মেহেদী হাসান বলেন, সবার আগে নিজেদের সংশোধন করতে হবে। কারণ, বিগত পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সব অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে কী সরকারি কর্মকর্তা, কী শিক্ষক এমনকি সাংবাদিকরা পর্যন্ত দলকানা হয়ে গেছেন। তাই এখন প্রয়োজন সবার মাইন্ড সেটআপ চ্যাঞ্জ করা। আর এসব করতে না পারলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। কারণ এরইমধ্যে দেশের ২৩টি জেলায় মতবিনিময় করে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক সবাই কেবল নিজেদের সুযোগ-সুবিধা পেতে চান। কিন্তু গত ১৭ বছরে তারা এসব চাননি কেনো? সেই প্রশ্ন রাখেন উপস্থিত সবার কাছে। তাই পরিবর্তন করতে হলে সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে। এই জন্য নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন। এ সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের সাহসী কিছু ভূমিকার জন্য প্রশংসা করেন।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ সেলিম, জেলা জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, সিভিল সার্জন ডা. নূরুল আলম দ্বীন, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান, জেলা জজকোর্টের পিপি কোহিনুর বেগম, নারী নেত্রী মনিরা বেগম, সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল রুবেল, জাকির হোসেন, তালহা জুবায়ের, জেলা তথ্য কর্মকর্তা তপন ব্যাপারী, চাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রবিউল আলম, সাগর হোসেন, রাহাত বিন রুবেল, কে এম সালাউদ্দিন, প্রমুখ।