এদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী জনগণের ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক। ডাকাত এস আলমের ডাকাতির মাধ্যমে ব্যাংকটি ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা শুনেছি, এই ব্যাংকের টাকা শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা একই পরিবারের চুরি করেছে। এখন তারা এই চুরির জন্য লন্ডনে ধরা পড়েছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে সেখানকার সংসদ সদস্য এবং ভাগ্যক্রমে তিনি মন্ত্রীও হয়েছেন। এখন সেখানে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এটা বাংলাদেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক। আমরা যদি লজ্জিত হই? তাদের লজ্জা নেই।
শনিবার সকালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ারদারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
সম্মেলনে শফিকুর রহমান বলেন, যারা স্বাধীনতার অন্বেষণে জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের সব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তারা কেউ তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়নি। তারা কথা বলেনি। তারা বারবার জাতির প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছে। জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এ দেশ আমাদের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের। যুগ যুগ ধরে এদেশে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করে আসছি। এর আগে আমরা দুইবার স্বাধীন হয়েছি, ৪৭ সালে, ৭১ সালে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জামায়াতের আমির বলেন, তাদের হাত যেখানে হাঁড়ি সেখানেই দেশে টাকার খনি। এই টাকা তারা পেল কোথায়? তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পিয়নের অ্যাকাউন্টে ছিল ৪০০ কোটি টাকা। প্যানের কাছে এত টাকা থাকলে মালিক কত টাকা? হ্যাঁ, মালিকের টাকাও বেরিয়ে আসছে। এই কুষ্টিয়ার পাশেই রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখান থেকে মাত্র একটি প্রকল্প থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে মালিকের পরিবার। এভাবে যেখানেই মেগা উন্নয়নের কথা, সেখানেই মেগা ডাকাতি।
শফিকুর রহমান বলেন, একটি পদ্মা সেতু নির্মাণে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা দিয়ে অন্তত চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। তাহলে বাকি তিনজন গেল কোথায়? হিসাব একেবারে পরিষ্কার। যারা দেশের টাকায় বিদেশে বেগমপাড়া প্রতিষ্ঠা করেছেন তারাই এই টাকা চুরি করেছেন। কিন্তু চোরের বড় গলা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের পারিবারিক বিষয় তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ছিল তাদের আয়ের উৎস। আর তাদের লিভার ছিল পৃথিবীর অন্য কোথাও। এদেশের প্রতি তাদের সহানুভূতি থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাদের পরিবারের সবাই বিদেশে, বেগমপাড়ায়।’
সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এদেশে কোনো সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা শুনতে চাই না। সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক বা সংখ্যালঘু, বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী সকলেই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এদেশের গর্বিত ও মর্যাদাবান নাগরিক। রাষ্ট্রের সংবিধান সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে। আল্লাহর সংবিধানও তাদের সমান অধিকার দিয়েছে।
নারীদের পোশাক প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, বোরকা কালো, লাল, সাদা না বেগুনি হবে সেটা আমার দায়িত্ব নয়। কারো উপর বোরকা চাপানো হবে না। যে মা মনের তৃপ্তি নিয়ে বোরকা পরতে চান, বোরকা পরতে চান, তিনি তা করবেন। আমি অন্য ধর্মের মায়েদের কেমন পোশাক পরাই। ইসলাম কি আমাকে এই দায়িত্ব বা অধিকার দিয়েছে? কোনোটিই নয়। তারা যা খুশি তাই করবে।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রকাশ্যে কর্মীসভাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার জামায়াত কর্মী সরকারি কলেজ মাঠের দিকে মিছিল করে। সকাল ৯টায় পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কেও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। তারা বিভিন্ন স্লোগানে কলেজ মাঠ প্রকম্পিত করে রাখে।