অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ বজায় রেখে পারস্পরিক ‘আস্থা ও সহযোগিতা’র পররাষ্ট্রনীতি অব্যাহত রাখবে।
তিনি দেশবাসীকে ধর্ম ও আদর্শের ভেদাভেদ ভুলে বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা।” সরকারপ্রধান আরও বলেন, এই অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের উপস্থিতিতে তিনি ‘গর্বিত ও অনুপ্রাণিত’। তিনি বলেন, আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে চাই। তারা আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে তার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিয়েছি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে যা যা প্রয়োজন তা করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। মতভেদ ভুলে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তর্ক থাকবে, তবে আমরা কারও শত্রু হব না। তাদের মতামতের কারণে আমরা কাউকে শত্রু মনে করব না। ধর্মের কারণে আমরা কাউকে শত্রু ভাবব না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারো উপরে নয়, কেউ কারো নিচে নয়—এই ভাবনাকে আমরা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। “দেশকে স্বাধীন করা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বৈষম্যমুক্ত, শোষণমুক্ত রাষ্ট্র, মুক্ত বাতাস। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে ইউনূস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এখন থেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন জনগণই এদেশের প্রকৃত ক্ষমতার উৎস হয়। প্রধান উপদেষ্টা আরও মন্তব্য করেন যে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং বিশ্ব শান্তি ও অর্থনীতিকে সুসংহত করতে ‘সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে’। তিনি বলেন, “আমাদের এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেখানে আমাদের তরুণরা তাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাদের মেধার ভিত্তিতে তাদের নিজস্ব সৃজনশীলতা বিকাশ করে দেশে অবদান রাখতে পারে।” এর আগে সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুহাম্মদ ইউনূস। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বাংলাদেশ প্রতি বছর দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটিকে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে।