নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিআরটিসি বরিশাল বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার অপারেশন জামশেদ আলী বিপুর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা, যোগাযোগ উপদেষ্টা ও দুদক বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বিগত ২০১১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার সুবাধে শেখ হাসিনার হাত ধরেই বিআরটিসির মতিঝিল বাস ডিপোতে পরিযান কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পান জামসেদ আলী বিপু। ওই একই সময় আ’লীগের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে হয়ে যান ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার অপারেশন। শুরু হয় জামশেদ আলী রামরাজত্ব। তিনি ম্যানেজার অপারেশন হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। কোন আইনের তোয়াক্কা না করেই নিজেই তৈরি করে নিজের আইন। তার নিজস্ব আইন না মানলে ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ শ্রমিকদের উপর নেমে আসতো অমানুষিক নির্যাতন। সাময়িক বরখাস্ত, বেতনভাতা কর্তন, মিথ্যা জরিমানাসহ কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানান ব্যাবস্থা নিতেন তিনি।
জামসেদ আলী বিপু বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে নিজেকে শেখ হাসিনার একান্ত লোক হিসাবে পরিচয় দিতেন। আবার কখনো শেখ হাসিনার পিএস-২ গাজি হাফিজুর রহমান লিকুর আবার কখনো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের লোক বলেও পরিচয় দিতেন তিনি। দুর্দান্ত দাপট দেখাতেন তিনি। তার ভয়ে ডিপো সহ বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের অনেকে ভয়ে তটস্থ থাকতো।
মতিঝিল বাস ডিপোর দ্বায়িত্বে থাকা কালিন সময়ে ১,০২,৬০,৩২২ (এক কোটি দুই লক্ষ ষাট হাজার তিনশত বাইশ) টাকার জ্বালানী বকেয়া রাখেন। এরপর নারায়নগঞ্জ ও জোয়ারসাহারা বাস ডিপোতেও দ্বায়িত্বে থাকাকলীন সময়ে তিনি ২৭,৩৩,৫৬০ টাকা বকেয়া রাখেন। মিরপুর ১২ নম্বর দ্বিতল বাস ডিপোতে জয় নামক এক কথিত লিজ পার্টিকে দিয়ে শ্রমিকদের নামে ৭৩,০০,০০০ (তিয়াত্তর লক্ষ) টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেন। যার নামমাত্র দায় সারা ভাবে জয়ের নামে একখানা জিডি (সাধারন ডায়েরী) করেন। এরপর ২০২২ সালের ৩রা অক্টোবর ৩৭,২০,৮৯০ টাকা আত্মসাৎ করেন।
জামসেদ আলী বিপুর নানা রকম অনিয়ম ও দূর্নীতির কারনে তাকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি জামশেদ আলী বিপুর। দুর্নীতি করে রাতারাতি বনে জান শত কোটি টাকার মালিক। বিআরটিসির মতিঝিল বাস ডিপোতে যোগদানের পর তিনি দলীয় ক্ষমতা খাটিয়ে বরিশাল বাস ডিপোতে ম্যানেজার অপারেশন হিসাবে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের আগে এ বাস ডিপোতে মাসে অর্ধ কোটি টাকা আয় হত বলে ডিপোতে কর্মরত চালক-সুপারভাইজারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান। সেখানে জামশেদ আলী বিপুর নানারকম অনিয়মের কারনে মাসে আয় ১৫ লাখ টাকায় নেমে আসে।
এছাড়া ডিপোতে জ্বালানী বকেয়া রয়েছে ১০ লক্ষ টাকা এবং যন্ত্রাংশ বাবদ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বকেয়া রাখেন তিনি।
বরিশাল বাস ডিপো থেকে ২০২৪ সালের ৩১শে মে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বাস ডিপোতে বদলী হওয়ার সময় ডিপোর প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব জমা না দিয়ে তিনি চলে যান।
বরিশাল বাস ডিপোতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নামে-বেনামে গাড়ি পরিচালনা করে সরকার নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে কম রাজস্ব নিয়ে গাড়ি পরিচালনা করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গোপালগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে বর্তমানে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে জামশেদ আলী বিপু কর্মরত রয়েছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ আছে জামশেদ আলী বিপুর ঢাকার সেগুন বাগিচা এলাকায় ১২০০ স্কয়ার ফিটের একটি অত্যাধুনিক ফ্লাট ক্রয় করেন এবং নামে-বেনামে ঢাকায় একাধিক ফ্লাট ও জমি রয়েছে। এছাড়াও নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। এছাড়াও মাদারীপুর জেলার রাজৈর শশুর বাড়ির এলাকায়ও গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। তার এত সম্পদ রয়েছে যে ছাগল কান্ডের মতিউর কেও তিনি হার মানিয়েছেন।
এ সব অভিযোগের ব্যাপারে জামশেদ আলী বিপু’র সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১২- ১৮৭৭৯০ নম্বরে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিপ করেনি। পরবর্তীতে আরো কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।