ইসরায়েল গতরাতে গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরে হামলা চালিয়েছে। হামাস অনুমোদিত যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে মঙ্গলবার মিশরে আলোচনার প্রাক্কালে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগে ইসরায়েল এই হামলা চালায়।
ইসরায়েল কয়েক সপ্তাহ ধরে উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সীমান্ত শহরে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়ার পর ইসরায়েল একটি স্থল অভিযানের লক্ষ্যে সোমবার পূর্ব রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের একটি ‘সম্প্রসারিত মানবিক এলাকায়’ চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
শহরের একজন এএফপি’র সংবাদদাতা সারারাত ভারী বোমাবর্ষণের কথা জানিয়েছেন। কুয়েতি হাসপাতাল মঙ্গলবার ভোরে বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় পাঁচজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
দিনের প্রথম দিকে আলোচনা একটি চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যর্থ হওয়র পরে হামাস সোমবার সন্ধ্যায় সাত মাসের চলমান যুদ্ধে তাদের ‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের অনুমোদন’ সম্পর্কে মধ্যস্থতাকারীদের মিশর ও কাতারকে অবহিত করেছে। এতে রাফাহতে ফিলিস্তিনি জনতা রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, প্রস্তাবটি ‘ইসরায়েলের অপরিহার্য দাবিগুলো থেকে অনেক দূরে’, তবে ‘একটি চুক্তির সম্ভাব্যতা চূড়ান্ত করতে’ সরকার আলোচনার জন্য আলোচনাকারীদের মিশর পাঠাবে।
ইসরায়েল বলেছে,‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধের অন্যান্য লক্ষ্য অর্জন এগিয়ে নিতে হামাসের ওপর সামরিক চাপ দেয়ার জন্য তারা ইতোমধ্যে রাফাতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।’ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা হামাসের প্রতিক্রিয়া ‘পর্যালোচনা’ করছে।
হামাস সদস্য খলিল আল-হাইয়া কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে তাতে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি জড়িত।
তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, যুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তন এবং একটি জিম্মি-বন্দি বিনিময়। যার লক্ষ্য ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’।
কাতার বলেছে, তারা আলোচনা পুনরায় শুরু করতে মঙ্গলবার সকালে কায়রোতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে। তারা ‘আশা করছে আলোচনাটি গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এএফপি’কে বলেছেন, ইসরায়েলকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে নাকি ‘বাধা’ দেবে।
সোমবার রাতে পুনরায় ফিলিস্তিনিদের রাফাহ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘বিমান রাফাহ এলাকায় ৫০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তকে লক্ষ্য করে দিনব্যাপী হামলা চালিয়েছে।’
হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ সোমবার রাতে বলেছে, তারা জবাবে গাজা থেকে দক্ষিণ ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করেছে।
মিশরের সীমান্তে অবস্থিত রাফাহতে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণের পরিণতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সতর্কতা ক্রমাগতভাবে জোরদার হচ্ছে।
শহরটিতে একটি স্থল অভিযান ‘অসহনীয়’ হবে উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েল এবং হামাসকে ‘আরো জোর প্রচেষ্টা চালানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন।
গুতেরেস বলেছেন,‘এটি এমন একটি সুযোগ যা হাতছাড়া করা যাবে না এবং রাফাহতে একটি স্থল অভিযানের বিধ্বংসী মানবিক পরিণতি এবং এই অঞ্চলে এর অস্থিতিশীল প্রভাবের কারণে অসহনীয় হবে।’
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখেরও বেশি গাজাবাসীর জন্য ‘গুরুতর মানবিক ঝুঁকি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে এবং ইসরায়েলকে ‘সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রাফাহতে একটি ‘নতুন গণহত্যা’ বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করতে বলেছেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সোমবার নেতানিয়াহুর সাথে কথোপকথনে বাইডেন শহরটি আক্রমণের বিরোধিতা করে ‘তার স্পষ্ট অবস্থান’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
নেতানিয়াহু কোন যুদ্ধবিরতি পাত্তা না দিয়ে অবশেষে রাফাতে স্থল সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাতকারী ৭ অক্টোবরের রক্তাক্ত হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হামাসের অবশিষ্ট বাহিনীকে মূলোৎপাটন করতে হবে।
হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩৪,৭৩৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।