হেলাল শেখঃ রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ফুটপাত হকারদের দখলে— বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে মাহিন্দ্রা, অটোরিক্সাসহ তিন চাকা ও অবৈধ যানবাহন কতৃর্ক ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
দেখা যায়, সাভার ও আশুলিয়ায় সরকারি জমি, খাল বিল, নদী ও সড়কের ফুটপাত বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মহাসড়ক ও শাখা সড়কে অনেক বেশি তিন চাকা অটো রিক্সাসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশিরভাগ গাড়ি চালক ট্রাফিক আইন মানেন না, তাদেরকে কেউ টেনিং করায়নি বলে তারা জানায়, সরকার চাইলে সকল গাড়ি চালকদের টেনিংয়ের আওতায় আনা যেতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন সচেতন মহল। রাস্তায় গেলেই দেখা যায়, শিশু ও কিশোরাও গাড়ি চালায়, এর কারণে যেখানে—সেখানে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। অনেক মানুষের অকালে মৃত্যু হচ্ছে।
বিশেষ করে ট্রাফিক বিভাগের নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা বিনা প্রয়োজনে যানবাহন থামিয়ে যদি গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এর কারণে যানজট ও জটিলতা সৃষ্টি হয়। যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি থেকে বিরত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কাজে নিয়োজিত সদস্যরা বিশেষ সুবিধা নেয়ার জন্য অযথা যানবাহনের ডকুমেন্ট পরিক্ষার নামে চাঁদাবাজি করার গ্রাস থেকে বিরত রাখা হলে জনগণ কতৃর্ক সরকার প্রধান দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাবে এবং সম্মান করবে,প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বের প্রতি আরও অধিকতর শ্রদ্ধাশীল হবে জনগণ। অনেকেরই অভিমতঃ বাংলাদেশে ট্রাফিক বিভাগে রেকারভীতির মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা গ্রহনে বিরত এবং রেকার বিল ট্রাফিক মামলার টাকা সরকারি রাজকোষে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হলে এতে সরকারের রাজকোষে শত শত কোটি টাকা জমা হবে।
সড়ক ও মহাসড়কের যানবাহনে চাঁদাবাজি, যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার বিষয়ে প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও ঢাকা বিভাগের সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কালিহাতি, ঘাটাইল, গাজীপুর, শ্রীপুর, নরসিংদী, সিলেট, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনার কাশিনাথপুর, রাজবাড়ি, ফরিদপুরসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় ব্যস্ততম সড়ক ও হাইওয়ে রোডসহ বিভিন্ন সড়কে তিন চাকা মাহিন্দ্রা, অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে দালাল কতৃর্ক ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। নামে বে—নামে দালাল চক্র নতুন নতুন কৌশলে মাসিক মানফি (কথিত মানতি) প্রতি মাসে সিস্টেমে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে। অন্যদিকে ট্রাফিক আইন মানছে না বেশিরভাগ গাড়ি চালক ও পথচারীরা, এতে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের জিরানী বাজার রোড, ধামসোনা ইউনিয়নের শ্রীপুর, ভাদাইল মোড়, পুরাতন আশুলিয়া থেকে (নরসিংহপুর) ও নরসিংহপুর থেকে কাশিমপুরের রাস্তায় অবৈধ শত শত তিন চাকা মাহিন্দ্রা এবং অটোরিক্সা থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে প্রভাবশালীদের দালালরা। তারা অনেকেই বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গাড়ি চালানো হচ্ছে। ঢাকা জেলার আশুলিয়ার বিশমাইল, নবীনগর, নয়ারহাট, বাইপাইল, (ভাদাইল মোড়) শ্রীপুর, জিরানী, অন্যদিকে জামগড়া, ছয়তালা, নরসিংহপুর, জিরাবো, পুরাতন আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্পট থেকে মানিক, দুলাল, মিজান, মেহেদী, বাবুল ও সুমনসহ ৭—৮জন দালাল কতৃর্ক লাইনম্যান দিয়ে ঢাকা জেলার সাভার ট্রাফিক জোন এলাকায় নতুন কৌশলে চাঁদাবাজি করছে, অনেকসময় পরিবর্তন করা হয় লাইনম্যানকে। উক্ত ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।
সুত্র জানায়, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে লাইনম্যান বদলে দেওয়া হয়, লাইনম্যান ও দালালদের মাধ্যমে প্রতিটি মাহিন্দ্রা থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। মাহিন্দ্রা গাড়ি চালক মোঃ সাদ্দাম মিয়াসহ কয়েকজন গাড়ি চালক জানান, চাঁদাবাজ ও দালালরা প্রতিটি মাহিন্দ্রা চালকের কাছ থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদাবাজির কথা কাউকে না বলার জন্য চালকদেরকে ভয় দেখায় এই চক্রটি। চালকরা আরও বলেন, নতুন নতুন কৌশলে পরিবহনে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি, এ যেন দেখার কেউ নেই। সেই সাথে সরকার নতুন আইন করায় গাড়ি চালকরা বিপাকে পড়েছেন বলেও তাদের দাবি। গত বছরে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় চলাচলরত অটোরিকশা থেকে টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠে আশুলিয়া থানা যুবলীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে, কিন্তু চাঁদা আদায় সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এরপর আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহবায়ক কবির হোসেন সরকার বলেন, যুবলীগের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজ নয়, আর যারা যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করছে,তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এ বিষয়ে কবির সরকার গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, যুবলীগ বা আমার জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করতে একটি মহল আমার রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য বদনাম করার চেষ্টা করছে। এই চাঁদাবাজ চক্রটি দলীয় কোনো নেতা কর্মী নয়। কবির সরকার আরও বলেন, আমি গণমাধ্যমকর্মী ভাইদের আহ্বান জানাই যে, আপনারা অনুসন্ধান করে সঠিকভাবে সত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।
আশুলিয়া থানার শ্রীপুরের স্থানীয় প্রভাবশালী বাবুল নামের এক ব্যক্তি লাইনম্যান রেখে তাদের দিয়ে চাঁদার টাকা কালেকশন করায়, চাঁদাবাজির সময় বেশ কয়েকজনকে পুলিশ কতৃর্ক গ্রেফতার হয়, এরপর সিস্টেম পাল্টেছে চাঁদাবাজরা। বাবুলের প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়, প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে তারা। এ বিষয়ে বাবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা কথা। শ্রীপুরে ড্রাইভারদের কোনো সমস্যা হলে আমি দেখি। অন্যদিকে ইপিজেড ও ভাদাইল মোড় থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা চাঁদাবাজি হয় বলে অনেকেই জানান। এ বিষয়ে ধামসোনা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাদেক হোসেন ভুঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জানিনা। এদিকে আশুলিয়াসহ সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে মার্কেটগুলোর সামনের ফুটপাত হকারদের দখলে, এর কারণে পথচারীরা চলাফেরা করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের সাভার জোন এর (এসআই) আনোয়ার হোসেনসহ একাধিক পুলিশ অফিসার জানান, তিন চাকা অটোরিকশা, বা মাহিন্দ্রা ও লাইসেন্সবিহীন কোনো যানবাহন মেইন রোডে চলাচলের সুযোগ নেই। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে ওই স্থানে যিনি ডিউটি করেন তিনি বিষয়টি দেখবেন।