রাণীশংকৈলে পদমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় তারমধ্যে ৪ শিক্ষার্থী জিপিএ—৫ সহ পাশ করেন ৪১ জন। ৪ জন শিক্ষার্থী যারা জিপিএ —৫ এর কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তাদের কারো বাবা টিউবওয়েল মিস্ত্রী, মোবাইল সার্ভিস মেকার আবার কারো বাবা ইট ভাটার শ্রমিক। ৪ জন শিক্ষার্থীর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এমন সাফল্যের পরেও ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা হলেন— আলাপী, জান্নাতুন, মীম ও তানজিলা । আলাপীর বাবা আনসারুল ইসলাম ইট ভাটা শ্রমিক, বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সে দ্বিতীয়। তার বড় ভাই গতবছরে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ —৫ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে না পেরে বর্তমানে ঢাকায় কোন এক গার্মেন্টসে কাজ করছেন। চলতি পরিক্ষায় আলাপীও এমন কৃতিত্ব অর্জন করে অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আলাপী বলেন, ‘‘আমি অনেক কষ্ট করে টিউশনি করানোর পাশাপাশি নিজে পড়াশোনা করেছি । ছোট বেলা থেকেই আমার স্বপ্ন একজন ডা. হওয়ার। কিন্তু অর্থের অভাবে শেষ পর্যন্ত কি হবে জানিনা’’। জান্নাতুনের বাবা তরজন আলী একজন টিউবওয়েল মিস্ত্রী, তিন ভাই বোনের মধ্যে সে ছোট এবং সে একজন শারিরিক প্রতিবন্ধী। দু হাতের ২ টি করে ৪টি আঙ্গুল তুলনামূলক ছোট। এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জিপিএ—৫ পেয়েছেন। জান্নাতুন বলেন, ‘‘আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, অনেকেই হেয় প্রতিপন্ন করে যে আমি পড়ালেখা করে কি করবো। তবুও কোন প্রতিবন্ধকতা আমার ইচ্ছা শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি পারিবারের সাহস ও নিজের চেষ্টায় আমি জিপিএ —৫ পেয়েছি। আমি পড়ালেখা শেষ করে একজন ভালো শিক্ষক হতে চাই’’। মিমের বাবা মনিরুল ইসলাম টুকিটাকি মোবাইল সার্ভিসের কাজ করেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। অভাবের সংসার তাদের। মিম বলেন, ‘‘ছোট বেলা থেকেই আমার স্বপ্ন আমি একজন মানবিক ডা. হবো। আমার এলাকার বেশিরভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। আমি বড় হয়ে এলাকার এসকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার পরিবারের এমন অবস্থায় বর্তমানে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমার স্বপ্নের শেষ পরিণতি কি হবে জানা নেই’’। তানজিলার বাবা হাবিবুর একজন ইট ভাটা শ্রমিক দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। দারিদ্র্যতার কারণে ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। নিজের ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে আজ জিপিএ—৫ এর সফলতা অর্জন করেছেন। ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ডা. হওয়ার। তবে দারিদ্র্যতা তাদের পরিবারে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। খোঁজ নিয়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে’’।
তাহেরুল ইসলাম তামিম স্টাফ রিপোর্টার(ঠাকুরগাঁও) মোবা: ০১৬৪৩৬২৪৯৮৭
তরিখ ১৮—০৫—২০২৪