দেশের শতাধিক ইউনিয়ন প্লাবিত বন্যার পানিতে-কৃষকের মরার উপর খাড়ার ঘাঁ

জাতীয়

হেলাল শেখঃ দেশের উত্তর-পূর্বা লে শতাধিক ইউনিয়ন প্লাবিত বন্যার পানিতে। বৃষ্টি ও বন্যায় দেশের অনেক জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। একদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন অন্যদিকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা নদীর পানি প্রায় ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নেত্রকোনা, ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। কৃষকদের জমির ফসল ডুবে গিয়ে এখন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। একদিকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে কৃষিতে, অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ফসল করতে গিয়ে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েন, অন্যদিকে সেই ফসল পানিতে ডুবে সবকিছু শেষ।
সিলেট সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক ফসল ডুবে গেছে পানিতে, ধানসহ সব ফসল শেষ। অন্য জেলাগুলোতেও নতুন ফসল ফলনে বিঘাপ্রতি জমিতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে দেড় থেকে ২হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই সাথে প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে টিলার ব্যবহারের খরচ ও কৃষি শ্রমিকদের মজুরি। এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হয়েছে। কৃষক মোঃ ময়না মিয়া ও শরিফ মিয়া বলেন, জমিতে চাষ করে সার, বীজসহ অনেক টাকা খরচ করেছি বা, এখন পানিতে ডুবে গেছে সকল ফসল, বর্তমানে পুয়া পুরি (ছেলে মেয়ে) নিয়ে অনেক কষ্টে আছি, আমাদের এখন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। ঘরে খাবার নেই, না খেয়ে থাকলেও কেউ আমাদের খবর নিচ্ছেন না বলে তারা জানান।
দেশের অন্য জেলাগুলোর কৃষকদের দাবি-বীজ, কীটনাশকের বাড়তি দামের কারণে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেশ বেড়েছে কিন্তু এ মৌসুমে তারা ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এতে তাদের অনেক বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষকেরা বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষি জমিতে ফসল না হলে মানুষ কি খেয়ে বাঁচবে এমননি প্রশ্ন করেন অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেন।
উত্তরের প্রায় জেলাগুলোতে চলছে এ মৌসুমের চাষাবাদ। নতুন ফসলে ভরে উঠেছে উত্তরের জেলাগুলোর মাঠ। উৎপাদন হচ্ছে, হরেক রকমের সবজি, ধান, পাট। দেখা যায়, ফলন ভালো হলেও মলিন কৃষকের মুখ। সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ করতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এদিকে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিজেলের বাড়তি দামে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। তাই অনেক বর্গা চাষি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ফসল আবাদ করা থেকে। অনেক কৃষি কর্মকর্তাও মনে করেন যে, ডিজিলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আবাদি ফসলের ওপর। বেড়েই চলেছে কৃষকের খরচ। এর সাথে কৃষি শ্রমিক ও টিলারের মালিকরা বাড়িয়ে দিয়েছেন মজুরি ও খরচ। কয়েক মাস আগেও (৩৩ শতাংশ) এক বিঘা জমিতে খরচ হত ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার থেকে ১৫০০টাকা। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, কিছু কৃষক আছেন যে, তারা এক বিঘা জমি বন্দকী হিসেবে এক বছরের ফসল ভোগ করার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে জমির মালিকের কাছ থেকে নিয়ে সার, বীজ ও কীটনাশক কিনে জমিতে দিয়ে ফসল আবাদ করেন, জমি চাষাবাদ করাসহ এক বিঘায় তাদের খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। অনেক ফসল আবাদ করে কৃষকের লোকসান হয়। কারো আবার এর চেয়ে বেশি বা কম খরচ হয়। কৃষকরা অনেকেই বলেন, কোনো কারণে এক বছর ফসল নষ্ট হলে, অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয় তাদেরকে, যেমন সিলেটের সুনামগঞ্জের মানুষ এই ২০২২ সালের মে মাসে সেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। অনেক কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় বলে অনেকেই জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *