বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তায় চৌধুরী প্লাজার ২য় তলায় ডক্টরস জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১১ মে ২০২৩ইং) অভিযোগকারী ভুক্তভোগী মোঃ রঞ্জু মিয়া বলেন, জামগড়া ডক্টরস হাসপাতালের কাউছার হোসেন (৪৫) এর বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, অদ্য ১১/০৫/২০২৩ তারিখ ভোর রাত হইতে আমার মেয়ে ফাতেমা বেগম (২০) এর কোমরের বাম পার্শ্বে হঠাৎ ব্যথা উঠে। সকালে আমার মেয়েকে স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হইলে আমার মেয়ের কোমরের ব্যথা ভালো না হওয়ায়, বেলা ১১টার দিকে উক্ত বিবাদীর প্রতিষ্ঠান ডক্টরস হাসপাতালে নিয়ে যাই, হাসপাতালে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে কাউছার হোসেন আমার মেয়েকে দেখে ৪টি টেষ্ট করার জন্য আমার নিটক থেকে ৩১০০/টাকা খরচ নেয়। উক্ত ডাক্তার আমার মেয়ের কোনো টেষ্ট করেন না এবং কোনো চিকিৎসা প্রদান করেন না। ইতিমধ্যে আমার মেয়ে আরো শারীরিক ভাবে বেশি অসুস্থ হয় কিন্তু বিবাদী দ্বয় কোনো চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা না নেয়ায় বিষয়টি নিয়া তাদের সাথে আমার তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায় আমাদের সেখানে অনেক লোকজন সমবেত হয়। এ সময় লোকজন ঘটনা জেনে বলেন যে, কাউছার কোনো ডাক্তার নয়, সে উক্ত হাসপাতালের ম্যানেজার। এরপর দ্রæত সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য আমার মেয়েকে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করাই, আমি এই হাসপাতালের মালিক ও ম্যানেজারের প্রতারণার বিচার চাই, আর যেন কারো সাথে এমন প্রতারণা না করতে পারে তারা।
এর আগে র্যাব-৪ এর একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে দুইজন ভুয়া ডাক্তারসহ ৩জনকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন, এরপর দ্রæত তাদের জামিনও হয়েছে। যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুষের দোকান করে ফার্মেসী দোকানের মালিক ও হাসপাতালের স্টাফ ম্যানেজার ডাক্তার সেজে রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছেন এবং রোগী দেখছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে গত (৫ জুলাই ২০২১ইং) রাতের একটি ঘটনা ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে নিশ্চিত করেন ডক্টরস জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডাঃ এ, কে, এম লতিফুল বারী। তিনি বলেন, র্যাব অভিযান চালিয়ে প্রথমে ৪জনকে আটক করেন, এরপর একজনকে ছেড়ে দেয় এবং ৩জনকে গ্রেফতার দেখায়। ভুয়া ডাক্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের ৩জন স্টাফকে র্যাব আটক করে, এরপর তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জানা গেছে, এ বিষয়ে এক নারী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আশুলিয়া থানার মামলা নং ১৬/ তারিখ ০৫/০৭/২০২১ইং। আটককৃতরা হলো-কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার গলাচিপা গ্রামের সামসুল হকের ছেলে মনিরুল আলম (৪০), নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানার গোয়ালভিটা গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে মুনসুর রহমান (৩৭), ও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর থানার কাঠালডাঙ্গী বাজার এলাকার মকবুল ইসলামের মেয়ে মেরিনা আক্তার মেরি (২২)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই কোমড়ে ব্যাথা নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া চৌধুরী প্লাজায় ২য় তলায় উক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান এক নারী (২২)। তিনি ওই হাসপাতালে যাওয়ার পরে রিসিপশনে কথা বললে তারা মনিরুল আলমকে ডাক্তার পরিচয় দিলে তার সাথে ওই নারী রোগীর সমস্যার কথা খুলে বলেন। এরপর ওই নারী তখন তার কাছে সকল বিষয়ে খুলে বলেন, পরে ডাক্তার পরিচয়দানকারী ব্যক্তি তাকে ডক্টরস জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার লেখা একটি প্যাডে কিছু ওষুধ লিখে সীল ছাড়াই স্বাক্ষর করে দেন। সীল ব্যতীত প্রেসক্রিশন দেখে ওই নারীর সন্দেহ হলে তিনি হাসপাতালের বাহিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে র্যাবের টহলটিম দেখে তাদেরকে বিষয়টি জানায়। পরে র্যাবের টহল টিম ওই নারীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে ওই ডাক্তারের কাগজপত্র দেখতে চায়, কিন্তু তারা কাগজপত্র দেখাতে ব্যার্থ হওয়ায় এরপর র্যাব তাদের ৩জনকে গ্রেফতার করেন। এ সময় তাদের নিকট থেকে ভুয়া কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
সে সময় র্যাব-৪ এর (সিপিসি-২) শাখার কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খানের সাথে মুঠোফোনে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে মিজানুর রহমান নামের এক র্যাব সদস্য জানান, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন ফ্যান্টাসী কিংডমের বিপরীতে জামগড়াস্থ চৌধুরী প্লাজার ২য় তলায় ডক্টরস জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ উপস্থিত হয়ে আসামীদের কাছে ডাক্তারি সংক্রান্ত বিষয়ে কাগজপত্র দেখাতে বললে বর্ণিত আসামীরা তাদের কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় র্যাবের একটি টহল টিম সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সদের সহায়তায় ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় র্যাব সদস্যরা বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করেন। র্যাবের কর্মকর্তা একজন মেজর এর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত ১নং আসামী -২ ও ৩ নং আসামীদ্বয়ের সহায়তায় নিজেকে সনদধারী ডাক্তার হিসেবে জাহির করে রোগীদের বরাবরে ভুয়া প্রেসক্রিশন তৈরি করে উহার বিনিময়ে প্রতারণা মূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রত্যক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করে আসছিল বলে আসামীরা স্বীকার করেছে। উক্ত র্যাব অফিসে এসআই (নিঃ) শাওন মাহমুদ অপু কাগজপত্রসহ মালামাল জব্দ তালিকা করেছেন বলে তিনি জানান। সোমবার ৫ জুলাই ২০২১ইং গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। তারা জামিনে এসে আবারও সেই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ায় প্রায় প্রতিটি এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুদের দোকান বসিয়ে নিজেরাই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রি করছে এবং ডাক্তার সেজে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে বলে অনেকেই জানান। একদিকে ওষুধের গায়ে মূল্য লেখা নেই, অন্যদিকে ডাক্তার না হয়েও রোগী দেখছেন কথিত ডাক্তার, সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে অনেকেই এবং ওষুধ দিয়ে প্রতারণা করছেন। এ এলাকায় নি¤œ আয়ের মানুষের বসবাস এখানে যদি এমন প্রতারণা করা হয় তাহলে মানুষ আরও বেশি ক্ষতির শিকার হয়। প্রশ্নঃ এইসব ভেজাল ওষুধ তৈরি হয় কোথায়? সংশ্লিষ্ট প্রসাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল।
