শাহীন আহমেদ
পতেঙ্গা এলাকার সী বিচ ও কাঠঘরে আবাসিক হোটেলগুলোতে চলছে জমজমাট অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা। হোটেলগুলো বর্তমানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এমন কোনো কুকর্ম নেই যা হোটেলগুলোতে হচ্ছে না।
কাঠঘর থেকে সি বিচ রোড এবং সী বিচ এলাকায় অবস্থিত, হোটেল রয়েল, হোটেল সী কুইন , বিচ পয়েন্ট, হোটেল টার্নেল পয়েন্ট,হোটেল পতেঙ্গা টুডে, হোটেল টার্নেল ভিউ, হোটেল ডায়মন্ড, হোটেল বেলমন্ড,হোটেল বিএস এল,হোটেল পিএসপি,হোটেল সি বিচ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সাইমা, হোটেল সি কিং ,মিনি রিসোর্ট,সেকেন্দার রির্সোট, সহ একাধিক হোটেলে প্রতিদিন দেহ ব্যবসা ও নানান ধরনের অপকর্ম চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এখন এই থানায় চাঙ্গা হয় উঠেছে অবৈধ হোটেল ব্যবসা। এদিকে নগরীর এই স্থানে অপরাধ কর্মকান্ড মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশের অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্রটি ধীরে ধীরে হুমকির মুখে পড়ছে, অনিশ্চিত হচ্ছে ভ্রমনপিপাসুসহ স্থানীয় এলাকাবাসীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা আরো বলেন পতেঙ্গা সী বিচ এলাকা একটি পর্যটক কেন্দ্র কিন্তু এই মুহূর্ত পর্যটকারায় ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়, আবাসিক হোটেলগুলোতে খুন ছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপ, প্রতারণার মাধ্যমে নগ্ন ছবি ধারণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরসহ বিভিন্ন রকম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে এসব অপকর্ম । এসব হোটেল থেকে নিয়মিত চাঁদা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
সচেতন ব্যক্তির ও বলছেন ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ হয়ে উঠছে পতেঙ্গা এলাকার আবাসিক হোটেল গুলো। ভুয়া নাম-পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে হোটেলকক্ষ ভাড়া নিয়ে পরিকল্পনামাফিক টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে খুনিরা। অপরাধীদের জন্য এসব আবাসিক হোটেল এখন নিরাপদ কিলিং জোনে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির অভাব আর হোটেল কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনাই এ জন্য দায়ী বলে মত দিয়েছেন এলাকাবাসী ও সচেতন ব্যক্তিরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকে সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র। নারীদের ক্ষেত্রে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা আর পুরুষের ক্ষেত্রে মানবপাচার ও মাদক ব্যবসা নিয়ে নানা দ্বন্দ্বের কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে।
অসামাজিক কাজ করে পতিতারা একজন খদ্দেরের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পায়। তার মধ্য দালাল ও হোটেল মালিক মিলে ৪০০ টাকা নিয়ে যায় বলে একটি সূত্র জানায়।
ফলে পতিতারা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পেয়ে থাকে। তবে নারী যদি সুন্দরী হয় তার রেট একটু বেশি থাকে। সুন্দরী নারীদের খদ্দের রেট একটু বেশি হয় বলে সূত্র জানায়।
অনেক ধনী পরিবারের ছেলেরাও হোটেল গুলোতে যাতায়ত করে। এছাড়া মাদকাসক্ত, নেশাখোর, সন্ত্রাসীসহ সমাজের অপরাধীরাও পতিতাদের কাছে আসে। দেহ ব্যবসা নিরাপদে করতে হোটেল মালিক ও দালালরা স্থানীয় কিছু মাস্তান ও গুন্ডা পালে। এদের প্রতিদিন আয়ের একটি অংশ দিয়ে থাকে বলে সূত্র জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান, হোটেল মালিক ও দালালদের সঙ্গে পুলিশের মাসিক চুক্তি রয়েছে। যদিও পতেঙ্গা থানা পুলিশ এ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
তবে পুলিশ একদিনেই এসব ব্যবসা বন্ধ করতে পারে বলে সমাজপতিরা জানায়। পতেঙ্গার আবাসিক হোটেল গুলোতে অবাধে দেহ ব্যবসা করার কারণে সমাজে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একশ্রেণির দালাল পতিতাদের চুক্তি করে ঢাকা, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে পতেঙ্গার হোটেলগুলোতে নিয়ে আসে। আবার হোটেল মালিকরা দালালদের সঙ্গে চুক্তি করে কতজন নারী পতিতার চাহিদা রয়েছে। অনেক দালাল নিজেরাই পতেঙ্গা এলাকায় বাসা ভাড়া করে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব আবাসিক হোটেলে প্রায়ই পুলিশ অভিযান চালায়। রাতের বেলা অভিযান চালালে হোটেল মালিকরা বর্ডার ও নারী খদ্দেরকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয়। এ সময় দালালদের পতিতাদের স্বামী পরিচয় দিলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না বলে পুলিশ জানায়।
হোটেল গুলোতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন শ্রেণির খদ্দের সংখ্যাই বেশি। তবে এসব কাজে নির্দিষ্ট খদ্দের সংখ্যার মধ্য সীমাবদ্ধ থাকে। নুতন খদ্দের হলে পুরনো খদ্দেরদের সঙ্গে আসে তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলেই দুর্বৃত্তরা প্রকৃত নাম-ঠিকানা গোপন রেখে বোর্ডার হিসেবে রুম ভাড়া নেয়। বোর্ডারদের নাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্যসংবলিত ফরম পূরণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও আলোকচিত্র ধারণের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ হোটেলে এসব নিয়ম না মেনে বোর্ডারদের কক্ষ ভাড়া দেয়। এ কারণে এসব হোটেলে খুন ছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপ, প্রতারণার মাধ্যমে নগ্ন ছবি ধারণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরসহ বিভিন্ন রকম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরাতন দালাল বলেন, গ্রামাঞ্চল থেকে আসা যুবক-যুবতী ও এক শ্রেণির মধ্যেবয়সী নারীরা তাদের পরকীয়া প্রেমিকসহ হোটেলে এসে অসামাজিক কার্যকলাপ লিপ্ত হয়ে থাকে। বিনিময়ে হোটেল ম্যানেজার ও হোটেল বয় অধিক টাকা পেয়ে থাকে। এরা ডাক্তার দেখানোর নাম করে ডাক্তারের ফাইল নিয়ে হোটেল গুলোতে আসে। ১/২ ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। এদের বেশির ভাগ স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকে। আর রুম ভাড়া বাবদ হোটেল কতৃপক্ষ ১০০০-১৫০০ টাকা পেয়ে থাকে।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি তদন্ত ফরিদুর রহমান বলেন, হোটেলে যখন অসামাজিক কার্যক্রম চলে এবং ছেলে মেয়েরা উঠে তখন আপনি আমাদেরকে ফোন দিয়েন আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেব এবং পুলিশ পাঠিয়ে দিব।
এ বিষয়ে বন্দর জোনের এডিসি বলেন , আমাদের পুলিশী কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং আমি ওসিক সাহেবকে এখনি বলে দিচ্ছি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে পুলিশের ট্রল গাড়ি ওই এলাকায় বাড়িয়ে দেওয়া হবে।