মোঃ আবুল কাশেম:
গাজীপুরের শ্রীপুরের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মাওনা চৌরাস্তায় বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ নভেম্বর বিকালে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জিয়াউল করিম মোড়ল রিফাত এর আয়োজনে এ র্যালিতে উপজেলার ছাত্রদের আগমনে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পিয়ার আলী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক মাসুম আহমেদ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ বাপ্পি সরকার, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ন আহব্বায়ক তুহিন প্রধান, মুফাসসেল ফকির, নাইম সিকদার সহ জেলা ও উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ের উত্তর পাশ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ ঢাকা মহাসড়কের এক কিলোমিটার এলাকা প্রদক্ষিণ করে মাওনা উড়াল সেতুর নিচে এসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর আজ। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পাল্টে গিয়েছিল। দেশ ও জাতি পেয়েছিল নতুন দিশা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনা সদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেন। নিজেকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ৬ নভেম্বর বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে গ্রেফতার করে মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন খালেদ। প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে বসান। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়ে সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসে। সিপাহি-জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। পাল্টা অভ্যুত্থান ঠেকাতে গিয়ে ৭ নভেম্বর সকালে কয়েকজন অনুসারীসহ প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ। অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে। জিয়া চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। এর পর থেকে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি। তবে আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনামলে গত দেড় দশকেরও বেশি সময় দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এ বছর দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। ঘোষণা করা হয়েছে ১০ দিনের কর্মসূচি। এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর ২০২৪) বিকেল ৪ টায় গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় মহাসড়কে র্যালী, মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে জিয়াউল করিম মোড়ল রিফাত, এর নেতৃত্বে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী বৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। উক্ত আলোচনা সভায় জিয়াউল করিম মোড়ল রিফাত বলেন, যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবির মাধ্যমে সমাবেশ শেষ হয়।