বিশেষ প্রতিনিধি, ফরহাদ ভূঁইয়া চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীতে থানা লুটের অস্ত্র দিয়ে ডাকাতির ঘটনায় আরিফ হোসেন প্রকাশ মেহেদীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার দেওয়া তথ্যে নগরীর বারিকবিল্ডিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ৭.৬৫ এমএম বোরের একটি ইতালিয়ার পিস্তলসহ ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, উদ্ধারকৃত পিস্তল ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া। এবং গুলিগুলোও থানা থেকে লুট হওয়া।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া।
জানা গেছে, মেহেদী, মনির এবং ‘পিচ্চি’ জাহিদ প্রত্যেকের নামেই আছে ডজন ডজন মামলা। চট্টগ্রাম শহরের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের টার্গেট। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি-ডাকাতির জন্যে তাদের নেতৃত্বেই আছে ১০ জনেরও অধিক সদস্যের দল। মূল ‘আস্তানা’ নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং হলেও গোটা নগরজুড়েই যেন তাদের ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’। সম্প্রতি নগরের ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডে ডাকাতি, আগ্রাবাদের ‘ক্যাট’ নামক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি এবং পাঁচলাইশের একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাতেও জড়িত ছিল এই সিন্ডিকেট।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি বারিক বিল্ডিং এলাকায় ডাকাতির টাকা ভাগাভাগির খবর পেয়ে অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই এই চক্রকে ধরতে নজরদারি বাড়ানো হয়। ঘটনার সাথে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারের পর তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে এই চক্রের আদ্যোপান্ত। চক্রের অন্যতম হোতা আরিফ হোসেন মেহেদীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও অন্যরা অধরা।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, সকালে বারিক বিল্ডিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরিফ হাসান মেহেদী ওরফে পলাশকে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার আস্তানা থেকে আমরা একটি টিপ ছোরা, চায়নিজ কুড়াল, দুটি ছুরি, একটি করে গামছা ও বালিশ এবং চারটি লোহার রড জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় ৫০ রাউন্ড গুলিও।
তিনি বলেন, তাদের মূলহোতা ডাকাত মেহেদী এবং মনির। তারা চট্টগ্রাম শহরে বড় বড় কমার্শিয়াল হাবে ডাকাতি করে যাচ্ছে। তাদের সাথে আরও আছে পিচ্চি জাহিদ। সিএমপিতেই যার বিরুদ্ধে ৪০ থেকে ৪২টি মামলা আছে। আজ যাকে গ্রেপ্তার করেছি মেহেদি, তার বিরুদ্ধে পঞ্চাশটিরও বেশি মামলা আছে। মাস দুয়েক আগে বারিক বিল্ডিং মোড়ে অভিযান চালানোর সময় আমাদের দুজন পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে তারা পালিয়ে যায়। সেখান থেকেও আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তারা ডাকাতির টাকা সেখানে বসে ভাগ করছিল। আবার জামিনে বের হয়ে চক্রটি আরও বড় করেছে। এই চক্রের সাথে আরও জড়িত আছে রাতুল, হানিফ, নুরুন্নবি, শ্রাবণ এবং বদর।’
হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, আমরা আরিফের কাছ থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করেছি সেটি ডবলমুরিং থানায় বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের জমা রাখা একটি অস্ত্র। সেটি ইতালির তৈরি ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম; থানা থেকে গত ৫ আগস্ট লুট হয়েছিল। গুলিগুলোও থানা থেকে লুট করা। এই চক্রটি ৫ আগস্টের আগেও ছিল। তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। যাদের আমরা এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছি; তারা ৯০ শতাংশই চট্টগ্রামের বাইরের। এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।