“কুতুবদিয়া হারিয়ে গেলে, বাংলাদেশ তার সুন্দর দ্বীপগুলির মধ্যে একটি হারাবে। আমি অবিলম্বে একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।”
কুতুবদিয়া – ইতিহাসের এক টুকরো, স্বপ্নের এক টুকরো, বাংলাদেশের এক টুকরো। দেশের প্রাচীনতম দ্বীপগুলির মধ্যে একটি, আজ জলবায়ু পরিবর্তনের নিষ্ঠুর শিকার। সঠিক বাঁধের অভাবে, এটি প্রতিদিন ধীরে ধীরে সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে, তার অস্তিত্ব, মানুষ, তাদের স্বপ্ন, ফসল এবং তাদের ভবিষ্যৎ হারাচ্ছে।
শতাব্দীর ইতিহাস কাঁদে —
১৫৬৯ সালের বন্যা, ১৭৯৫ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৮৭২ সালের দুর্যোগ এবং ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে, কিন্তু প্রকৃতিকে অমান্য করে কুতুবদিয়া মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতি বছর, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত, বঙ্গোপসাগর ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছিল ২৯শে এপ্রিল, ১৯৯১, যখন একটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় হাজার হাজার প্রাণ কেঁপে ওঠে এবং সমগ্র গ্রামকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। শিশুদের হাসি থেমে গেল, মায়েরা তাদের সন্তানদের হারিয়ে ফেললেন, আর সমুদ্র মৃতদেহে ভরে গেল।
আজও, কুতুবদিয়া গভীর জলে ভাসছে, টেকসই বাঁধ ছাড়াই এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম নিরাপত্তা ছাড়াই। প্রতিদিন, সমুদ্র কুতুবদিয়াকে আরও কিছুটা গ্রাস করছে, এর মানচিত্র, ইতিহাস, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎ মুছে ফেলছে।
আমাদের প্রশ্ন:
কখন আমাদের একটি টেকসই বাঁধ হবে?
কখন আমরা ভয় ছাড়াই ঘুমাতে পারব?
সরকার পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আরও কত প্রাণ হারাতে হবে?
আজ, কুতুবদিয়ার মানুষ তাদের আন্তরিক দাবি জানাচ্ছে:
১. কুতুবদিয়ার চারপাশে অবিলম্বে একটি টেকসই, উচ্চমানের বাঁধ নির্মাণ।
২. ভূমিক্ষয় রোধে বৈজ্ঞানিক প্রকল্প বাস্তবায়ন।
৩. উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য জরুরি বাজেট তহবিল বরাদ্দ।
৪. উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য পৃথক তহবিল এবং জাতীয় জরুরি সুরক্ষা প্রকল্প প্রতিষ্ঠা।
আজ কুতুবদিয়া ডুবছে, কাল পুরো উপকূল ডুবে যাবে।
আজ, এটা কুতুবদিয়ার কান্না, কিন্তু আগামীকাল এটা পুরো জাতির কান্না। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কুতুবদিয়াকে বাঁচানোর লড়াইয়ে যোগ দেই।
“সরকার আসে আর যায়। এক নেতা বসে, আরেক নেতা দায়িত্ব নেয়। তারা বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়, টেন্ডারের কথা বলে, কিন্তু কিছুই করা হয় না। আমরা দেখি আমাদের উঠোনের মাটি বাঁধ নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু বৃষ্টি এলে তা ভেসে যায়, জোয়ার আসার অপেক্ষায়। আমি ছোটবেলা থেকেই এই সার্কাস দেখছি। আমরা টেন্ডারের কথা শুনি, কিন্তু যখন কাজের কথা আসে, তখন আমরা কেবল আমাদের উঠোনের বালি দেখতে পাই, যা জোয়ার সহ্য করতে পারে না।”
এটা শুধু আমার এলাকা নয়, বরং কুতুবদিয়ার পুরো চিত্র। আর কতদিন এভাবে চলবে? আমাদের প্রতি এত অবহেলা কেন? কুতুবদিয়ার মানুষের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই? কুতুবদিয়ার দুর্দশার কথা বলার কেউ আছে কি? কুতুবদিয়ার অনেক প্রবীণ ব্যক্তি ভালো জায়গায় আছেন, তবুও আমরা এখনও এত কষ্ট সহ্য করছি কেন?
আমরা খুব বেশি কিছু চাইছি না। আমরা কেবল আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার চাই। আমাদের একটি বাঁধ দরকার – একটি টেকসই বাঁধ। আমাদের অস্থায়ী বালির বাঁধের প্রয়োজন নেই। আমি ঢাকার সকল কুতুবদিয়াবাসীকে ২৯শে এপ্রিল, মঙ্গলবার মানববন্ধন প্রতিবাদে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রতিবাদের বিস্তারিত:
স্থান: রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তারিখ: ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫
সময়: বিকাল ৪:৩০, মঙ্গলবার আর্টিকেল: ইন্জিনিয়ার জিহাদ সিকদার সহ সভাপতি: লেমশীখালি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন