ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
ঈদের দিন ভিড়ের মাঝে হল কর্তৃপক্ষের শো বন্ধের সিদ্ধান্ত, পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান অভিনীত ‘তান্ডব’ সিনেমা প্রদর্শনের সময় কারিগরি ত্রুটির জেরে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী ‘ছায়াবাণী’ সিনেমা হলে ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
ঘটনাটি ঘটে ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) বিকেলে নগরীর সি কে ঘোষ রোড এলাকার ছায়াবাণী হলে। ত্রুটি দেখা দিলে একপর্যায়ে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে উত্তেজিত দর্শকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরে হলে ভাঙচুর ও মালামাল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে।
এ অবস্থায় এক শো বন্ধ রাখে হল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর পুনরায় প্রদর্শন শুরু হয়।
ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ শহর একসময় ছিল সমৃদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল। আশির দশকে শহরের অজন্তা, ছায়াবাণী, অলকা, পূরবী ও সেনা অডিটরিয়াম মিলিয়ে পাঁচটি সিনেমা হল ছিল যা দর্শকদের ভরপুর সাড়া পেত। জনপ্রিয় ছবি মুক্তি পেলে এক হল থেকে আরেক হলে দর্শক ছুটে যেতেন।
তবে সময়ের ব্যবধানে মানহীন ছবি, দর্শক সংকট এবং ২০০২ সালের পর সিনেমা হলগুলোতে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার ঘটনা দর্শকদের হলে যাওয়া নিরুৎসাহিত করে। এরপর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় অজন্তা, অলকা ও সেনা অডিটরিয়াম।
বর্তমানে শহরে বাণিজ্যিক কারণে পূরবী সিনেমা হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ চলছে। শেষ অবশিষ্ট ছায়াবাণী সিনেমা হলও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক সংকটে ছিল। ঈদের মৌসুম ছাড়া দর্শক পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
‘তান্ডব’ সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর ছায়াবাণী হলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। সকাল থেকেই দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। নির্ধারিত আসনের তুলনায় অতিরিক্ত দর্শকের চাপ ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে হল কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একমাত্র ঈদ বা বিশেষ উৎসব ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সিনেমা হল পরিচালনা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন টেকসই সংস্কার, নিরাপদ পরিবেশ এবং মানসম্মত সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শনের ধারাবাহিকতা।