রাজশাহী মহানগরে ছিনতাই এখন আর বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এটি যেন প্রতিদিনকার বাস্তবতা। দিনের আলো ফুরালেই শহরের রাজপথ, গলিপথ এমনকি জনবহুল এলাকাও হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের বিচরণক্ষেত্র। পথচারী, শিক্ষার্থী, রিকশা ও অটোচালক—সবাই এই অপরাধের শিকার হচ্ছেন, যার ফলে ভয় আর অনিশ্চয়তা গ্রাস করছে সাধারণ নাগরিকদের মন।
গত সপ্তাহেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ জানতে পারে, ছিনতাই করা টাকায় মোবাইল রিচার্জও করা হয়েছে।
কাটাখালী ও দামকুড়ায় একাধিক চালককে ছুরিকাঘাত করে বাহনসহ অর্থ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বোয়ালিয়া থানার আওতায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ১০ হাজার টাকা। এসব ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, একাধিক ঘটনায় কিশোর গ্যাং এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্র জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এদের অনেকেই মাদকাসক্ত, আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকেও রেহাই পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কিশোর গ্যাংগুলো এখন কেবল ছিনতাই নয়, চাঁদাবাজি ও সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। তারা ভুক্তভোগীদের ফোন, মানিব্যাগ, এমনকি স্কুলব্যাগ পর্যন্ত ছিনিয়ে নিচ্ছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ানো হয়েছে টহল, স্থাপন করা হয়েছে চেকপোস্ট। তবে বাস্তবতা বলছে—অনেক এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা অচল, অপরাধের পর সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতির।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, “সন্ধ্যার পর যদি রাস্তায় বের হতে হয়, মনে হয় জীবনটাই বাজি ধরছি। প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।”
নগরবাসীরা বলছেন, শুধুমাত্র টহল ও মামলা দিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “যদি এখনই ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এটি রাজশাহীর একটি স্থায়ী সংকটে রূপ নিতে পারে।”