তাহেরুল ইসলাম তামিম, প্রতিনিধি, (ঠাকুরগাঁও) ঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের কাতিহার আরবিবি ইট ভাটায় স্বর্ণের খোঁজে মাটি খুঁড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। গত শুক্রবার (২৪মে) সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর রাত থেকে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ কেউ কোদাল, কেউ বাসিলা, কেউ খুন্তি নিয়ে স্বর্ণের খোঁজে মাটি খনন করছেন। ভাগ্য বদলের আশায় দিন—রাত চলছে মাটি খনন প্রতিযোগিতা। রাতের অন্ধকারে টর্চ লাইট, মোবাইলফোনের আলোতে ইটভাটার মাটির স্তূপ জোনাকীর আলোর মত জ¦লজ¦লে রূপ ধারণ করেছে। দূর থেকে গভীর অন্ধকারে এমন পাহাড়ের দৃশ্য দেখে চমকে উঠবেন যে কেউ—ই। এখন হাজারো মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা কাতিহারের ইট ভাটার মাটির স্তূপ। কেউ ভাগ্য বদলের আশায় আবার কেউ শখের বসে গভীর রাতে খুঁড়ে চলছেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত স্বর্ণ। আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে স্বর্ণের সন্ধানে ভাগ্য বদলের জন্য ছুটে এসেছেন নানান পেশার মানুষ। আবার নিরাশ হয়েও ফিরছেন অনেকেই। স্থানীয়রা জানায়, মাটি খুঁড়ে সাত আটমাস থেকেই অনেকে সোনা পাচ্ছেন। তাদের দাবি, ওই ভাটার মাটির স্তূপে অনেক দিন আগে থেকেই সোনা পাচ্ছেন লোকজন। ইতোমধ্যে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। সম্প্রতি সোনা বিক্রি করে অনেকেই মোটরসাইকেল কিনেছেন এমন কথাও অনেকের মুখে শোনা গেছে। কিন্তু কে কে সোনা পেয়েছেন এ কথা স্বীকার করছেন না কেউ। তাদের দাবি, অনেকেই সোনা পেয়েছেন তবে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন এই ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। ওই এলাকার বয়স্কদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কাতিহার বাজারে শ্যামরাই মন্দিরের আশে—পাশে রাজার আমলে রাশ মেলার আয়োজন হতো। সেই সব জমির মাটি খনন করে ইট তৈরির জন্য নিয়ে এসে ওই ভাটায় স্তুপ করে রাখা হয়। সেই স্তুপ থেকে এলাকার এক জন দু’জন করে বেশ কয়েকজন স্বর্ণ পাওয়ার পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। গত মাসে দু’তিন জন সাংবাদিক এসে এই সংবাদ প্রচার করলে, বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ ভাগ্য বদলের জন্য স্বর্ণের খোঁজে মাটি খুরতে আসছেন। এছাড়াও অনেক স্বর্ণপেয়ে তাদের ফেইসবুক আইডিতে স্বর্ণের ছবি সহ পোস্ট করেছে,আবার অনেক স্বর্ণ বিক্রি আগে মোবাইলে ছবি ধারণ করে রেখেছে যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উমের আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত স্বর্ণ কেউ পেয়েছে এরকম আমি দেখিনি। তবে শুনেছি মানুষ নাকি স্বর্ণ পেয়েছে, যারা পেয়েছে তারা সকলেই গরিব ও শ্রমিক মানুষ। প্রশাসন আসছিল কিন্তু হাজার হাজার লোক জায়গাটা ঘিরে রাখায় তারা কিছুই চেক করতে পারেনি’। ইটভাটার ব্যবস্থাপক লিটন আলী বলেন, ‘কাতিহার সামরাই মন্দিরের পাশ থেকে মাটি খনন করে ইটভাটায় স্তূপ করা হয়েছে। ওই মাটির স্তূপ থেকে নাকি স্বর্ণের জিনিস পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই সাধারণ মানুষ দিন রাত ওই মাটির স্তূপ খনন করে স্বর্ণের সন্ধান করছে।’ রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’।