সৌদিআরবে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় দালালদের প্রতারণার ফাঁদ, নেপথ্যে আছে পতিত হাসিনার প্রেতাত্মা কাউন্সিলর হজ জহির ২৭ হাজার হাজীকে কষ্ট দিয়েছে প্রতারক জিয়া
স্টাফ রিপোর্টারঃ সৌদিআরবে হজ্জ যাত্রীদের মিনা মুজদালিফা আরাফায় সেবার নামে প্রতারণা করে আসছে কথিত হাফেজ জিয়াউর রহমান নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশী যিনি লেবার ভিসায় সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। এই জিয়া বিভিন্ন সৌদি কোম্পানীর দালালী করে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর প্রতিশ্রুত সেবা না দিয়ে ভোগান্তিতে ফেলছে হাজার হাজার বাংলাদেশী হাজীকে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র ও নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই সৌদি আরবস্থ কাউন্সিলর (হজ্জ) জহিরুল ইসলামের যোগসাজশে এই প্রতারক হজের মৌসুমে তার প্রতারণার জাল বিস্তার করে আসছে। সর্বশেষ একটি অখ্যাত সৌদি কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনর সাথে এই জিয়ার বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেন কাউন্সিলর জহির। যার ছবি ব্যবহার করে জিয়া আসন্ন হজ্জে ও তার প্রতারণার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আস্থাভাজন হওয়া সত্ত্বেও সৌদি আরবে হজ কাউন্সিল হিসাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা অন্তবর্তী সরকারের এই সময়ে হজ ব্যবস্থাপনাকে বিতর্কিত করতে অন্যান্য নানা কারসাজির পাশাপাশি সৌদি আরবে দালান জিয়াকে দিয়ে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানিয়েছেন, জিয়া নিজেকে হাফেজ জিয়াউর রহমান পরিচয় দিয়ে কখনে সৌদি ওমরাহ কোম্পানী, আবার কখনো হজ্জ কোম্পানীর নামে বাংলাদেশী এজেন্সিগুলোর থেকে হাজীদের সেবার দায়িত্ব গ্রহন করে প্রতারণা করে আসছে। প্রকৃতপক্ষে জিয়া হাফেজ নন এবং আলেমও নন।তিনি মুলত: সৌদি আরবের লেবার হিসেবে কাজ করতে যান। ওখানে কাজ করা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন রণ শুরু করেন।
একবার নজের কফিলের স্বক্ষর জালিয়াতি করে চেক দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে প্রতারণা করায় কফিলের ৬ মিলিয়ন রিয়ালের মামলায় ছয় বছর সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে সৌদি আরবের বিভিন্ন জেলখানায় ছিলেন। জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি সৌদি আরবের ‘বিনা’ উমরা কোম্পানির কিছু বই কন্ট্রাকে নিয়ে বাংলাদেশের কিছু ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ওমরার দালালির কাজ শুরু করেন। মূলত তিনি বিনা ওমরা কোম্পানির মালিকও নন, কর্মচারীও না। কিন্তু তিনি বিনা ওমর কোম্পানির মালিক/ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ওমরাহর কাজ করে সকল ট্রাভেল এজেন্সি কাছাকাছি আসায় পরিকল্পনা নেন। ২০২৩ সালে তিনি ‘বিনা’ নামে একট ক্যাটারিং কোম্পানি করে বিশাল অফিস নিয়ে বাংলাদেশের সকল ট্রাভেল এজেন্সি এবং সেলিব্রিটিদেরকে তার অফিসে নিয়ে খাবার ও উপঢৌকন দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুক, ইউটিউব এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার করে বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০২৩ সালে হজে তিনি সৌদি আরবের রিফান কোম্পানীর দালালী করেন। তিনি রিফাদ কোম্পানির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে পরিচয় দিয়ে বংলাদেশের ২৭ হাজার হাজির মাশায়ের (মীনা, আরাফাহ, মুজদালিহার) সেবার চুক্তি করেন। পরবর্তীতে হজের মূল কাজের কয়েক দিন আগে জানা যায়, আসলে তিনি রিফাদ কোম্পানির দালাল। রিফাদ কোম্পানীকে না জানিয়ে অনেক এজেন্সীর সাথে অনেক রকম চুক্তি করে হাজি প্রতি ১০০০ রিয়ালেরও বেশি হাতিয়ে নিয়ে ২কোটি ৭ লাখ ‘রিয়াল বাংলাদেশি ঢাকায় ৮৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার প্রতারণা প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় রিফাদ কোম্পানি থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। জিয়া রিফাদ কোম্পনীর নামে চুক্তিমতে হাজীদেরকে সেবা দেয়নি, যিনা ও অরাফায় সব হাজীদের খাবার দেয়নি। যাদেরকে দিয়েছে পরিমাণে একেবারেই কম এবং গাইড দেয় নি। ফলে এজেন্সিগুলো তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং হাজিরা কোম্পানীতে অভিযোগ করলে তাকে বাদ দেয়া হয়। সৌদি আরবে এই জিয়ার প্রতারণার সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জনৈক মাওলানা কবির আহমদ।
বাংলাদেশের বেশ কিছু অপরাধী যারা শত কোটি টাকা নিয়ে সৌদি আরবে পলাতক আছে তাদের মধ্যে একজন মাওলানা কবির আহমেদ।
জানাযায় তার বিরুদ্ধে আল্লামা ওলিপুরীসহ বড় বড় আলেম ওলামাদের ১ শত কোটি টাকা আত্মসাত করে বিগত ২০ বছর সৌদি আরবে পলাতক থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
গতবছর রিফাত কোম্পানীর সাথে হাফেজ জিয়ার মাধ্যমে হজ্জ চুক্তি করায় কাউন্সিলার (হজ্জ) জহিরুল ইসলাম সকল ট্রাভেল এজেন্সি কে তিরস্কার করে এবং বলে যে, ভবিষ্যতে কখনো এরকম দালালের মাধ্যমে কাজ করবেন না। করলে আমরা হজ্জ মিশন থেকে আর কোন সময় দায়িত্ব নেব না। কিন্তু পরবর্তীতে হাফেজ জিয়া কাউন্সিলর জহিরুল ইসলামকে ম্যানেজ করে। যার জন্য ২৭ হাজার হাজিকে এত কষ্ট দেয়ার পরেও হাফেজ জিয়ার ব্যাপারে কাউন্সিলর হজ্জ বা হজ্জ মিশনের পক্ষ থেকে একটি বাক্যও উচ্চারণ করা হয়নি। উপরন্তু এ বছর আবার হাফেজ জিয়াকে নিয়ে সৌদি আরবের একটা অখ্যাত নতুন কোম্পানির নামে ধর্ম উপদেষ্ট আ ক ম খালিদ হোসেন কে প্রধান অতিথি করে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিশ্বস্ত কর্মকতা জহির সৌদি আরবে বৈঠকের আয়োজন করে। ধারণা করা হচ্ছে- জুলাই বিপ্লবে গৃহত্যার অন্যতম নির্দেশদাতা সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবের ভাই কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন ও বর্তমান বিপ্লবী সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য সেই বিতর্কিত জিয়াকে নিয়ে বিশাল পরকল্পনা হাতে নিয়েছে।
বাংলাদেশে হাফেজ জিয়ার প্রতারণার শিকার হজ্জ এজেন্সি গুলোর মালিকরা এ ব্যাপারে ধর্ম উপদেষ্টা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জিয়ার প্রতারণা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপশি বিগত আওয়ামি সরকারের বিশ্বস্ত কাউন্সিলর জহিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।