সৈয়দ মেজবাহ উদ্দীন, প্রতিনিধি, কলাপাড়া, পটুয়াখালী।। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এটি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডে (বিভিন্ন ধরণের পুরণো মালামাল রাখার ছাউনি) এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দুই ঘন্টা পর রাত সাড়ে নয়টার কাছাকাছি সময় আগুন নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস দলের সদস্যরা।
আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সেলিম ভূঁইয়া এবং প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. তৌফিক ইসলাম সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় আরএনপিএল কর্তৃপক্ষ গতকাল রাত তিনটার সময় তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করেছে। বিদ্যুৎ প্লান্টের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল হালিমকে তদন্ত টিমের প্রধান করা হয়েছে। এ টিমে বিদ্যুৎ প্লান্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শওকত ওসমান ও উপ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আমিনুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে। তাঁরা আগামী দুই কর্ম দিবসের মধ্যে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানা গেছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তত বেশি হয়নি। কারণ আগুন লাগার খবর পেয়ে কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বিদ্যুৎ প্লান্টের কনিষ্ঠ নির্বাহী মো. মহিউদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরাসহ আরএনপিএল বিদ্যুৎ প্লান্টের নিজস্ব ফায়ার সার্ভিস দল, নিকটবর্তী পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফায়ার সার্ভিস দল এবং নৌবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ঘটনাস্থলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের দলটি আগুন নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়। এতে কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপন হয়নি।
কমপক্ষে ২০ একর জায়গা নিয়ে বিদ্যুৎ প্লান্টের দক্ষিণ অংশে তৈরি করা স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডটিতে রাখা প্লাস্টিকের ড্রাম, প্লাস্টিকের খালি বোতল, বিটুমিনের খালি ড্রাম, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের টুকরা, বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন পণ্যের লোহার পাতের প্যাকেজিং আগুনে পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে। পোড়া জিনিসপত্রগুলো থেকে সোমবার সকালেও ধোয়া বের হতে দেখা গেছে।
হঠাৎ করে লাগা আগুনের লেলিহান শিখায় নিরাপত্তা রক্ষীদের ১৩-১৪টি ডিউটি বক্স পুড়ে ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকান্ডের স্থলে অন্তত কয়েক হাজার টন স্ক্র্যাপসহ লোহালক্কর রয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কীভাবে আগুন লেগেছে তা কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। তবে স্থানীয়দের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে জানান, যেসব পুরণো বা ফেলনা জিনিসপত্র পুড়েছে তা বিক্রি করা হয়ে থাকে। এসব মালামাল বিক্রি থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় হয়। এটা কোনো নিছক অগ্নিকান্ড নয়। এর সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লোকজন জড়িত থাকতে পারে। আগুন তাঁরা নিজেরাই লাগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডে কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনই বলা যাচ্ছেনা। তবে এতে মূল পাওয়ার প্লান্টের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিষয়টি নাশকতার উদ্দ্যেশ্য কি না তাও এই মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছেনা।’ তিনি আরও বলেন, আসলে স্থানীয় একটি চক্র প্লান্টের ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন সময় এসব পরিত্যক্ত মালামাল চুরি করে নেয়ার চেষ্টা করেছে। বিদ্যুৎ প্লান্টের লোকদের বাঁধার কারণে নিতে পারেনি। এখন ওই চক্রের লোকেরাই এসব কথা বলে বেড়াচ্ছে। নানা ধরণের গুজব ছাড়াচ্ছে।