‘‘দ্বন্দ্বে কোনো আনন্দ নাই, আপস করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোনো চিন্তা নাই’’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে শেরপুরে উদযাপিত হলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০২৫। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এ আয়োজনকে ঘিরে জেলা প্রশাসন, আইনজীবী সমাজ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।
সোমবার সকাল ১০টায় শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। পরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়, যা প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আদালত প্রাঙ্গণে ফিরে আসে।
র্যালিতে নেতৃত্ব দেন শেরপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ জহিরুল কবির। তার সঙ্গে ছিলেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুলতান মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শাহ শিবলী সাদিকসহ বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
র্যালি শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বিনামূল্যে আইনি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁঞা বলেন,
“আইনি সেবা নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
শেরপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, গত এক বছরে জেলার প্রায় ১,২০০ জন সুবিধাভোগীকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক মানুষ লিগ্যাল এইড সম্পর্কে জানেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য বলেন,
“আইনগত সহায়তা শুধু মামলায় লড়াইয়ের বিষয় নয়, এটি সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম। আপস-মীমাংসার গুরুত্ব আমরা সবাইকে বোঝাতে চাই।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনজিও প্রতিনিধিরা জানান, গ্রাম ও মফস্বলে আইনি সেবা পৌঁছে দিতে স্থানীয় সংগঠনগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে সহায়তা পায়।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই দিবস?
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল পালন করা হয়। ২০০০ সালে সরকার দেশে সরকারি খরচে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আইনি সহায়তা দিতে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ গঠন করে। এরপর থেকে মানুষের ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো, আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিনামূল্যে সেবা গ্রহণের উৎসাহ দেওয়া।
সার্বিক মূল্যায়ন
অনুষ্ঠান ঘিরে বিচারক, আইনজীবী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সমাজের সচেতন প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জানান দেয়, শেরপুরে আইনি সহায়তার প্রসার ঘটাতে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে। তবে বক্তারা মনে করেন, শুধু দিবস উদযাপন নয়, সারা বছর ধরে মাঠপর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মাধ্যমেই এই উদ্যোগ সফল হবে।