খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার মাঠে এখন বোরো ধান কাটার ব্যস্ত মৌসুম। আকাশে ভাসমান মেঘ আর হঠাৎ শুরু হওয়া বৈশাখী বৃষ্টির পূর্বাভাসের কারণে দ্রুত ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মাঠে-মাঠে দেখা যাচ্ছে শ্রমিকের সারি, যেখানে কেউ ধান কাটছেন, কেউ বাঁধছেন, আবার কেউ মাথায় করে ধান নিয়ে ফিরছেন বাড়ির পথে।
পানিগাতী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, একদিকে চলছে ধান কাটার কাজ, অন্যদিকে উঠোনে মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। কৃষকের পরিবারে যেন দম ফেলারও সময় নেই।
চাষি নজরুল ইসলাম জানান,
“কালবৈশাখীর আগে ধান কেটে নেওয়ার জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। মেশিন ব্যবহার করে ধান ঝাড়ছি, এতে সময় বাঁচছে এবং ক্ষতির ঝুঁকি কমছে।”
আরেক কৃষক তৈয়ব মোড়ল বলেন,
“গত দুইদিনে কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার যা অবস্থা, যে কোনো সময় বড় ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হতে পারে। তাই দেরি না করে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলছি।” তিনি জানান, এ বছর ফলন সন্তোষজনক; প্রতি বিঘায় প্রায় ২০-২৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ারও আশা করছেন।
উৎপাদন ও সরকারি পরামর্শ
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দিঘলিয়ায় মোট ৪,৮৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ জানান,
“সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক পতিত জমিতে এবারে বোরো চাষ সম্ভব হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বাম্পার ফলন হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হচ্ছে।
ঝুঁকি ও প্রস্তুতি
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে খুলনা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বজ্রঝড় ও কালবৈশাখীর ঝুঁকিও রয়ে গেছে। ফলে মাঠের ধান বাঁচাতে কৃষকদের দ্রুত ধান সংগ্রহের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা সময়োচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“ঝড়ের মৌসুমে ধান যদি মাঠে পড়ে থাকে, তাহলে শুধু ফলনের ক্ষতি নয়, পাশাপাশি গুণগত মানও কমে যায়। তাই দ্রুত সংগ্রহ করাই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
সার্বিক চিত্র
দিঘলিয়ার মাঠে এখন সোনালী ধানের ঢেউয়ের পাশাপাশি সময়ের বিপরীতে দৌড়াচ্ছে কৃষকেরা। প্রকৃতির বিরূপতার শঙ্কা সত্ত্বেও তাঁদের চোখেমুখে আছে আশার আলো—ভালো ফলন আর বাজারে ন্যায্য দামের প্রত্যাশা।