শাহিন আলম
গণমাধ্যমের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তবে আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল তথ্যপ্রবাহের যুগে সাংবাদিকদের দায়িত্ব আরও অনেক বেড়েছে। তথ্য যাচাই এবং জনস্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ।
মানুষ এখন মন খুলে লিখছে, সমালোচনা করছে, এমনকি গালিও দিচ্ছে—কাউকে কিছু বলা হচ্ছে না, এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, অনেকে আমাদের স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতি সফট বলছেন। কিন্তু আমরা আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না।
শুক্রবার( ২মে২০২৫)চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুল আলম আরো বলেন, আমরা কোনো কলম ভাঙিনি, কোনো প্রেসে তালা দিইনি। গণমাধ্যমকর্মীর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। কোনো গণমাধ্যম কর্মী চাকরিচ্যুত হলে সংশ্লিষ্ট অফিসের সামনে প্রতিবাদ করুন।” তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে লেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে মানুষ খবরের চেয়ে ভিডিও বেশি দেখে—এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি ভিডিও দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘জামায়াত কর্মীরা ছেলেকে জবাই করেছে।’ পরে দেখা যায় ভিডিওটি ল্যাটিন আমেরিকার এক ড্রাগ-সংক্রান্ত ঘটনার।
এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সমাজে ও রাজনীতিতে বিভাজন তৈরি করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আমাদের গণমাধ্যমকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে হবে বলেও বলেন তিনি।
শফিকুল আলম আরও জানান, জাতিসংঘ জুলাই গণহত্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতার মান নিয়ে জাতিসংঘ যেন একটি প্যানেল গঠন করে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশেষ করে নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়, শাপলা চত্বর ঘটনা ইত্যাদি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
আলোচনায় জুলাই আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামের কিছু সাংবাদিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে—এমন গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে। এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত হওয়া উচিত। সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাবের উচিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়েছে। অথচ এটি কিছু মানুষের নিরাপত্তার জন্য প্রণীত হয়েছিল। বর্তমান সরকার মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী—এই আইন বাতিল হবে।
তিনি জানান, সরকার ইতোমধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, এবং কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ওসমান গণি মনসুর, চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নসরুল কদির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক রিজাউর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য নীলা আফরোজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ প্রমুখ।