সাগর আহমেদ, ঘাটাইল উপজেলা প্রতিনিধি
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত আজহার আলী (৬০)। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ নিজ এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
আজহার আলী উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ী (বিন্নী আটা) গ্রামের মসলিম উদ্দিনের ছেলে। এলাকাবাসী একাধিক সূত্রে জানায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে আদম ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এ ব্যবসায় আজহার অবৈধভাবে অঢেল টাকার মালিক বনেযান।
এই আজহারের বিরুদ্ধে এলাকাসূত্রে জানা যায় হর হামেশাই তিনি জবর দখল, চাদাবাজি, অর্থ আত্মসাত ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকেন। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গিলাবাড়ী গ্রামের আব্বাস আলী (৬০) নামের এক বৃদ্ধকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদম মারপিট করে রক্তাত করে এবং সোহেল সিদ্দিকী (৩০) নামের এক যুবককের নিজের মালিকানাধীন জমি বেদখল দিয়েছে আজহার। এ ঘটনায় ঘাটাইল থানায় একটি অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আজহার ও পরিবারের লোকজনের ক্ষমতার বলয়ে নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল ও অর্থ আত্মসাত তাঁর নেশায় পরিণত হয়। গত ৫ আগস্টের পর সরকারের পতন হলে আজহার কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও এখন আবার তার নিজ বাড়ীতে বসেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি এলাকায় ফিরে প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। অসহায় ব্যক্তিদের মারধর, হুমকি ধমকিসহ জোর-জবরদস্তি করে জায়গা দখল তাঁর নিয়মিত কর্মকান্ড হয়ে উঠেছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি দৈনিক চৌকস কে তাঁর এলাকায় ফিরে এমন কর্মকান্ডের বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আজহার তার দলবলে ২৮ এপ্রিল গিলাবাড়ী (বিন্নীআটা) গ্রামের ছালামের বড় ভাই আব্বাস আলীকে মসজিদে নামাজ শেষে ফেরার পথে মারপিট করেন। এক পর্যায় তিনি স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটেন দলবলে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আব্দুস সালাম দৈনিক চৌকস কে বলেন, ‘২০২১ সালে আমার নিকট থেকে আজহার তার নিজের ছেলেকে বিদেশ পাঠাবে বলে ৫ লাখ টাকা ধার নেয় এবং পরবর্তীতে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নেয় এই টাকা পরিশোধ করার বার বার
তারিখ দিলেও সে কোন প্রকার টাকা পরিশোধ করেনি। এ টাকা চাইতে গেলে সে আমাকে মারপিট ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, তাঁর ভয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর সন্ধানপুর ইউনিয়ন সহ আশপাশের কেউ মুখ খুলতে পারত না। এ সময় বিভিন্ন প্রলোভনে আশপাশের এলাকার প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মানুষের নিকট থেকে কোটির টাকার অধিক আত্মসাত করেছেন। তাঁরা বলেন, এই আজহার আবারও এলাকায় ফিরে এসে ফের পুরোনো কর্মকান্ডে মেতে উঠেছেন। বিশেষ করে গিলাবাড়ী (বিন্নীআটা) সহ আশপাশের এলাকার জনগণ ও জনপদ এই আজহারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাঁর চাচাতো ভাই বকুলও এ পথেই হাটছে। বকুলও ইদানিং অনেকের নিকট থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে আজহার আলী বলেন যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা। আমি সাধারণ কৃষক মানুষ। তবে আমার ইচ্ছা আমি জনগণের সেবক হবো। আমি দুইবার ইউপি নির্বাচন করেছি। সামান্য ভোটে হেরে গেছি। সামনে আশা রাখি আমি ইউপি সদস্য হবো।
ঘাটাইল থানার উপ পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি সত্যতা প্রমানিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।