শাহিন আলম
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠ আজ সাক্ষী হলো এক বিরল তরুণ জাগরণের। তীব্র গরম আর অসহনীয় তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক মহাসমাবেশে। ১০মে বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় বিকেল ৪টায়, এর আগ পর্যন্ত মঞ্চে চলতে থাকে উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত পরিবেশনা, যা মাঠের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিভাগের ১১টি জেলা—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও তার আশপাশের এলাকা তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভাগের ৯৯টি উপজেলার নেতাকর্মীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এই কর্মসূচিতে।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে আমরা এখানে একটি সমাবেশ করছি। একইসাথে ঢাকার নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে আরও সমাবেশ হচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না, কারণ তারা দেশে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন, বাকশাল কায়েম করেছে।
আমরা ভুলে যেতে পারি না—প্রথম সংস্কার শুরু করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন তিনিই। আজকের গার্মেন্টস ভিত্তিক অর্থনীতির মূল ভিতও তার হাত ধরেই গড়া। পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, যা ছিল গণতন্ত্র রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আজ বিদেশ থেকে এসে কেউ কেউ বড় বড় কথা বলছে—কিন্তু আমাদের মানুষ এত সহজে ভুলে যাবে না।
আমাদের তরুণ সমাজ ব্যবসা চায়, চাকরি চায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তি চায়। তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়, যেখানে প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে। আজকের এই তারুণ্যের সমাবেশের মূল লক্ষ্যই হলো—তরুণরা যেন আবার জেগে উঠে সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রুখে দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য। খালেদা জিয়া কাজ করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। তারেক রহমান আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে আমরা কিছু চাই না। এ কারণেই তারেক রহমান পরিষ্কারভাবে বলেছেন—সবার আগে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেছেন—ফয়সালা হবে রাজপথে, আর আজ সেটাই হচ্ছে।
মহাসমাবেশকে সফল করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। অনুষ্ঠিত হয় একাধিক প্রস্তুতি সভা, প্রচারণা কর্মসূচি ও সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, যা তরুণদের মাঝে কর্মসূচির প্রতি আগ্রহ ও সম্পৃক্ততার বিশেষ প্রতীক হয়ে ওঠে।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, অসহ্য গরমের মধ্যেও নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রমাণ করে, তরুণরা এখন রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি সচেতন ও সক্রিয়। এটাই সময়, তরুণদের রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য, এক কোটি নতুন তরুণ ভোটারকে রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা। রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিল্পে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য।
সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজমত আলী বাহাদুর বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা হবে গণতান্ত্রিক প্রতিশোধের রূপরেখা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মহাসমাবেশ বিএনপির তরুণ নেতৃত্বের সুসংগঠিত উপস্থিতি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক শক্তিমত্তার ইঙ্গিত দেয়। হাজারো তরুণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এক নতুন রাজনৈতিক আবহ তৈরি করেছে, যা আগামীর রাজনীতিতে তারুণ্যের অগ্রণী ভূমিকার বার্তা দেয়।