শাহিন আলম ,চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো
চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী পকেট গেট খালপাড় এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি চাঁদাবাজ চক্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সিন্ডিকেট প্রতিদিনই ফুটপাতের দোকান থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের এক নেতা মনসুর, যার নেতৃত্বে গঠিত একটি দল প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয় ফুটপাত দোকান থেকে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এই চক্র প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকে। আকমল আলী খালপাড় এলাকায় ২৫০টির বেশি দোকান থাকায়, মাসিক চাঁদার অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকায়।দোকানদারদের অভিযোগ—চাঁদা না দিলে দোকান ভাঙচুর, হুমকি এমনকি ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেয়া হয়।
দৈনিক চৌকস পত্রিকার প্রতিবেদকের হাতে থাকা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মনসুর নামের যুবদল নেতা ৫-৬ জনের একটি দল নিয়ে দোকানদারদের সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, আগে পুলিশকে দিতেন ৭০ টাকা, এখন থেকে দিবেন পুলিশের জন্য ৫০ টাকা, আর আমাদের জন্য ১০০ টাকা। এছাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসার সামনের দোকানগুলোর জন্য ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভিডিওতে মনসুরকে আরও বলতে শোনা যায়, আপনাদের কাছ থেকে যে টাকা নেই, এই টাকা তো আমার কাছে থাকে না। এই টাকা চলে যায় প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে। একই সঙ্গে ভিডিওতে মনসুরের সহযোগীদের দোকান থেকে টাকা তুলতেও দেখা গেছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রশ্নটি এখানেই—যদি এই বিপুল পরিমাণ অর্থ মনসুরের হাতে না থাকে, তবে কার হাতে থাকে। প্রশাসনের কোন স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায় এই চাঁদার টাকা। কীভাবে এই সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র বছরের পর বছর ধরে নির্বিঘ্নে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সে প্রশ্ন এখন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে।
বাড়ির সামনে দোকান বসালে বাড়ির মালিক চাদা নেয় ,চক্রের পক্ষ থেকে বাড়ির মালিকদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হলেও বেশ কয়েকজন বাড়িওলা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তারা কোনো চাঁদা আদায় করেন না। তাদের ভাষায়, যারা টাকা নিচ্ছে, তারাই জানে টাকা কাদের পকেটে ঢুকছে। আমরা তো দোকানদারদের কোনো টাকা চাই না।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে আমার নাম আসছে কেন, আমি বুঝলাম না। আমি কোনো টাকা নেই না। দোকানদারদের ঝামেলা ছিল, আমি তা মীমাংসা করেছি। তিনি আরও দাবি করেন, এখন যুবদলের কোনো কমিটি নেই এবং তিনি দলীয় পদে নেই। পুলিশের নামে টাকা তোলার প্রশ্নে তিনি বলেন, খালের পশ্চিম পাশে সাদ্দাম টাকা তোলে, আমি, মিন্টু আর সায়েদ জড়িত না।
আকমল আলী খালপাড় এলাকার অনেক দোকানদার অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সময় তাদের নেতাকর্মীরা টাকা নিতো, এখন বিএনপির সময় এলে বিএনপির নেতারাও নিচ্ছে। সবাই সমান, সবাই চাঁদাবাজ। দোকানদাররা চাদার টাকা না দিলে নানান ধরনের হুমকি দেওয়া হয়, এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এখনই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ইপিজেড থানার ওসি জামিল বলেন, আমি থানায় নতুন যোগ দিয়েছি, বিষয়টি আজকেই প্রথম শুনলাম। মাদক, জুয়া বা চাঁদাবাজি কোনো কিছুই বরদাশত করা হবে না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশ্ন উঠছে—একটি ভিডিও ফুটেজ, অসংখ্য অভিযোগ, অথচ এতদিন ধরে প্রশাসন নিশ্চুপ কেন? দেড় কোটি টাকার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের তদন্ত কি শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি এবার বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যাবে।
অনুসন্ধান চলবে পর্ব এক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম
সহ-সম্পাদকঃ আবুল কাশেম
বার্তা সম্পাদকঃ রাফসান জাহান
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা)মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০।রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন,চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০
ফোনঃ ০২২২৬৬৩৯৮৪৭
মোবাইলঃ ০১৬০০-৭২২২২৯,০১৯২০-০০৩০৮১
ইমেইলঃchoukasinfo@gmail.com,dainikchoukos@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক চৌকস. All rights reserved.