নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)-এর জোন ৩/২–এর গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীন আশরাফ সম্প্রতি তার কাজের দায়িত্ব পালন নিয়ে কিছু অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, তিনি ওই অভিযোগগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রকৌশলী শারমীন অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন, তথ্যগতভাবে ভুল এবং সম্ভবত কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা হয়েছে।
তিনি তার কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বলেন, একজন অথরাইজড অফিসার হিসেবে তিনি প্রতিটি নথিপত্র অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করেন। কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন বা অন্য কোনো দাপ্তরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, তিনি সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটির মতামত এবং মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকদের দেওয়া প্রতিবেদন গভীরভাবে পর্যালোচনা করেন। এরপর, বিদ্যমান নিয়মকানুন এবং সরকারি বিধি-নিষেধ মেনেই তিনি কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেন। প্রকৌশলী শারমীন জোর দিয়ে বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগতভাবে নিজের ইচ্ছামতো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগও তার নেই। সবকিছু একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে দিয়েই সম্পন্ন হয়।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় একটি বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে একটি অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি ছিল মূলত জমির দাগ নম্বর এবং জমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজউকের পক্ষ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হয়। সেই তদন্তে দেখা যায়, নকশা অনুমোদনের জন্য একাধিকবার যে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে উল্লিখিত জমির মালিকানা এবং অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে আসল নথিপত্রের কিছু গরমিল ধরা পড়েছে। তবে, রাজউকের এই অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীনের দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের অনিয়ম বা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া সমস্ত কাগজপত্র গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভবনটির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে যে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে রাজউকের নির্ধারিত নীতিমালা এবং সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার অধীনেই নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো একজন নির্দিষ্ট কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ইচ্ছানুসারে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ, পুরো অনুমোদন প্রক্রিয়াই একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ফল।
অভিযোগের বিষয়ে প্রকৌশলী শারমীন আশরাফ পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, সম্ভবত কিছু অসাধু চক্র তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, তার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং সরকারি নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলা। তিনি কোনো প্রকার ব্যক্তিগত লাভ বা ক্ষতির ঊর্ধ্বে থেকে কেবল সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছেন।
রাজউকের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এই বিষয়ে একই সুর প্রতিধ্বনিত করেছেন। তারা জানান, এই প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণ এবং যেকোনো ধরনের অনুমোদন প্রক্রিয়া বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ফলে কোনো একজন একক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রভাব এখানে খুবই সীমিত। কর্মকর্তারা আরও মনে করেন, এই ধরনের অভিযোগের পেছনে যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে, তবে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই সেই সত্য বেরিয়ে আসবে।
প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীন আশরাফ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি তার কাজের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে, ব্যক্তিগতভাবে কোনো ভুল করার সুযোগ তার ছিল না। রাজউকের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বরং, তিনি মনে করেন, একটি অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাকে টার্গেট করেছে এবং সমাজের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।