শাহিন আলম চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো
চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন কাঠঘর এলাকা ও আশপাশের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলকে কেন্দ্র করে একটি সংগঠিত অপরাধ চক্রের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হোটেল ব্যবসার আড়ালে সেখানে চলছে সংঘবদ্ধভাবে অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদকদ্রব্য সেবন ও চোরাচালান, এবং ব্ল্যাকমেইলসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এসব হোটেল দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতা ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাব জনমনে চরম উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় বৈধ দম্পতিদের ভিডিও গোপনে ধারণ করে পরে তা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করা হয় রয়েছে এমন অভিযোগ।
চট্টগ্রাম নগরীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা, যা প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমনে মুখর থাকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কিছু আবাসিক হোটেল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওই এলাকার সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে বলেও অভিযোগ করছেন পতেঙ্গা এলাকাবাসী।
দৈনিক চৌকস পত্রিকার প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছানো একটি ফোন রেকর্ডে এক হোটেল স্টাফ স্পষ্টভাবে বলেন, ভাই আপনি কি কিছু বুঝেন না, হোটেলে মেয়েদের না রাখলে এবং কিছু অন্যরকম না করলে এই হোটেল ব্যবসা কি করে চলবে, আরো বলতে শোনা যায় যদি কেউ দুধ দিয়ে গোসল করেও যদি বলে যে আমার হোটেলে কিছু রাখি না, অবৈধ কিছু হয় না তাহলেও আমি বিশ্বাস করবো না বুঝতে পেরেছেন ভাই এমনটাই বলছেন একজন কাস্টমারকে।আপনি নির্ভয়ে আসেন আমাদের হোটেলে, হোটেল স্টাফ কে আরো বলতে শোনা যায় কাঠঘর থেকে সিবিচ পর্যন্ত প্রত্যেকটা হোটেলেই দুইটা একটা তিনটা করে মেয়ে রাখা হয়, এবং কিছু হোটেলে বেশিও রাখা হয়, কেউ গোপনে করছে কেউ ওপেন সিক্রেট করছে, তাহলে এই স্টাফের ভাষ্যমতে কি বোঝা যাচ্ছে এটাও আর বুঝতে বাকি নেই।
গত ২৭ মে রাতে পতেঙ্গা থানার একটি অভিযানে হোটেল ডায়মন্ড থেকে পাঁচ জন নারী ও পাঁচ জন পুরুষকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অনেক সময় ভাই-বোন, বাবা-মেয়ে বা মা-ছেলে একসাথে পতেঙ্গা এলাকা ঘুরতে গেলে কিছু হোটেলের সামনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। হোটেলের কর্মীরা নানা অঙ্গভঙ্গি ও ইশারায় ডাকতে থাকেন—“ভাই, ভালো মানের রুম আছে ,সব আরাম আছে, এসিও আছে—এভাবে প্রলোভন দেখান হোটেল স্টাফরা।
ফলে পরিবারের সদস্যরা হোটেল গুলোর সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বিব্রত ও লজ্জিত বোধ করেন। এছাড়াও, অনেক হোটেলকর্মী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি আরও অপমানজনক—তারা নারীদের দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন চোখের দৃষ্টিতেই পুরো শরীর মেপে নেওয়া যায়।
এই ধরনের অশালীন আচরণ সামাজিক শালীনতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি বন্ধ করতে সচেতনতা ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন এমন ও অভিযোগ করেছেন পতেঙ্গা এলাকাবাসী।
অসামাজিক কার্যক্রমের বিষয় সি বিচ হোটেল মালিক সমিতি সভাপতি হানিফ এর সাথে যোগাযোগ করলে, কাঠঘর থেকে সি বিচ পর্যন্ত যে কয়টা হোটেল রয়েছে সব কয়টাতে অসামাজিক কার্যক্রম চলছে নির্বিঘ্নে এবং ২৭ মে রাতে পুলিশি অভিযানে ১০ জন ছেলে-মেয়ে আটক করা হয় এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
পতেঙ্গা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগগুলো নিয়ে বলেন, ভাই, দু’দিন আগে আমরা একটি অভিযান চালিয়ে পাঁচজন ছেলে ও পাঁচজন মেয়েকে আটক করেছি। কিন্তু আপনি জানেন, এই এলাকার অন্যান্য অনেক হোটেলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটছে। সেগুলোতে অভিযান চালালে আরও অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। আমি তো একজন ছোটখাটো অফিসার, আমার ক্ষমতার সীমা আছে। আপনারা দয়া করে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করুন—তাহলেই বিষয়টা উপরে পৌঁছাবে।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিক জানান, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, ডায়মন্ড হোটেল থেকে দশজনকে আটক করে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য হোটেলেও অভিযোগ রয়েছে, অভিযান চলমান থাকবে।
স্থানীয়দের দাবি, শুধু একটি বা দুটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না, বরং কাঠঘর থেকে সী-বীচ পর্যন্ত প্রতিটি হোটেলেই নিয়মিত অভিযান চালানো দরকার। তারা চান, পুলিশ আরও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করুক।
অনুসন্ধান চলবে।