বরগুনা বিশেষ প্রতিনিধি :
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজারের গণ্ডি পার করেছে।
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজমেরী মোনালিসা জেরিন নামের এক নারী উদ্যোক্তা, যিনি সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের কন্যা। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের ভাই মাইনুল ইসলাম রাসেল বলেন, তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি উভয়েই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, কিন্তু সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়াতেই প্রাণহানি ঘটেছে। তিনি জানান, হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসক খুঁজে পাননি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসাসেবার জন্য রয়েছেন মাত্র একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক। স্যালাইন, পরীক্ষার কিট ও মশারির মতো মৌলিক সরঞ্জামেও ঘাটতি রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনদেরকেই প্রায় সব সরঞ্জাম বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। জনবল সংকট এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির অভাবে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় নাগরিকরা দায়ী করছেন অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং কার্যকর মশক নিয়ন্ত্রণের অভাবকে। বরগুনা পৌরসভা ও গৌরিচন্না ইউনিয়নকে ডেঙ্গুর উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে জমে থাকা নোংরা পানি ও ময়লার স্তূপে মশার বংশবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে।
স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামের স্থানীয় সমন্বয়ক মহিউদ্দিন অপু মন্তব্য করেছেন, “আজমেরীর মৃত্যু একক কোন ঘটনা নয়—এটি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ববোধের ঘাটতির প্রতিচ্ছবি।” তিনি অবিলম্বে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং মশক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, “আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চেষ্টা করছি। চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ ও সরঞ্জামের সংকট রয়েছে—বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।”