খুলনার পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটছে মারামারি, কোপাকুপি, এমনকি রক্তক্ষয়ী হত্যাকাণ্ড। এতে আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ ও অভিভাবক মহল।
সম্প্রতি নগরীর কয়েকটি এলাকায় স্কুলপড়ুয়া কিশোরদের মধ্যে কথাকাটাকাটি থেকে শুরু করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ, খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের কনসার্ট চলাকালীন এক শিক্ষার্থী ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে প্রতিদ্বন্দ্বী কিশোর গ্যাং সদস্যরা। ওই হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও নতুন নতুন সংঘর্ষে জড়াচ্ছে কিশোররা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ‘ডেঞ্জার বয়েজ’, ‘গোল্ডেন বয়েজ’, ‘টিপসি গ্রুপ’-এর মতো কিশোর গ্যাং খুলনার বিভিন্ন মহল্লায় সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে সদস্য সংগ্রহ, ভিডিও ছড়িয়ে সন্ত্রাসের প্রভাব বিস্তার ও ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নামে এসব গ্যাং ত্রাস সৃষ্টি করছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পরিবার ও স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
সামাজিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়া, স্কুলে নজরদারির অভাব, রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার কিশোরদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা বলছেন, শুধু দমনমূলক পদক্ষেপ নয়, কিশোরদের জন্য পুনর্বাসন ও মানসিক কাউন্সেলিং চালু করা জরুরি।
খুলনার মহল্লাভিত্তিক কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এখন আর ছোটখাটো উত্ত্যক্ততার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির মতো ভয়াবহ ঘটনায় রূপ নিচ্ছে। প্রশাসন, পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই বিপজ্জনক প্রবণতা রোধ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।