সদরপুর, (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বহু বিত্তবান ব্যক্তিকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি হানি ট্র্যাপ চক্র।
জানাযায়, সদরপুরে দীর্ঘদিন যাবত এই চক্রটি একাধিক ব্যক্তি কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করেছে।
গত ৪ নভেম্বর এই চক্রটির খপ্পরে পরে সদরপুরের মুজাহিদ মৃধা নামক এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে ৭ নভেম্বর এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে সদরপুর থানায় ৯ জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৫ এবং ধারা ৩৪২, ৩৬৪, ৩৮৬ ও ৫০৬।
থানা সূত্রে জানাযায়, হঠাৎ করে মোবাইল ফোনে রং নাম্বরে অজ্ঞাতনামা এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয় মুজাহিদ মৃধার। তাদের মধ্যে কয়েকদিন মোবাইল ফোনে কথাবার্তা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে অজ্ঞাতনামা মেয়েটি তাকে ফোন দিয়ে বাইশরশি জমিদার বাড়ীতে আসতে বলে। তিনি সরল বিশ্বাসে উক্ত স্থানে যাওয়ার পর তাকে ওই মেয়েটি অটোবাইকে উঠতে বলে। অটোযোগে ঘোরাফেরার এক পর্যায়ে ওই মেয়েটি কৌশলে পূর্ব শৌলডুবী এলাকার সাবেক মেম্বার শেখ ফারুক এর বাড়ীতে একটি টিনের ঘরে নিয়ে মুজাহিদ কে আটক করে যেখানে পূর্ব থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্যের উপস্থিত ছিলো। এর পর ওই চক্রের কয়েকজন ব্যক্তি মুজাহিদ কে এলোপাথারী মারপিট করে এবং প্রাণনাশের ভয় দেখায়। পরে তার নিকট থেকে মুক্তিপণ বাবদ ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ও জোর পূর্বক ৪ টি সাদা নন-জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নেয়। বিষয়টি তার চাচা জানতে পেরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রাতের বেলা ফারুক মেম্বারের বাড়ীতে গিয়ে উক্ত চক্রের সোহরাব খালাসী নামে এক সদস্য কে আটক করে এবং মুজাহিদ কে উদ্ধার করে। ঐ সময় ওই চক্রের অন্যান্যরা পালিয়ে যায়।
পরে সোহরাব খালাসীকে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজনের নাম ঠিকানা জানা যায়। বিষয়টি সদরপুর থানা পুলিশকে জানালে তারা সোহরাব খালাসীকে গ্রেফতার করে।
পরে এ মামলায় এজাহার ভুক্ত আসামী শেখ ফারুক মেম্বার কে গ্রেফতার করা না গেলেও তার স্ত্রী রেনু বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২ জন লিমা আক্তার এবং রবিন নামের এক যুবক কে সহ মোট ৫ জন কে গ্রেফতার করে ফরিদপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়।
মুক্তিপণের এমন ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি সদরপুর থানায় আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন সদরপুর সদর ইউনিয়নের মৌসুমী আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার স্বামী ইসাহাক বেপারী দীর্ঘদিন যাবত সদরপুর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। গত ২ নভেম্বর তার স্বামী চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঢাকা রওনা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে তার স্বামী তাকে ফোন দিলে বলে ডাক্তারের সিরিয়াল দেওয়া হলে ডাক্তার দেখিয়ে ঢাকার এক হোটেলে অবস্থান করবেন। এর পর তার স্বামীর ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের কেও।
পরে ৩ নভেম্বর সকালে তার স্বামী তার মোবাইল নম্বর থেকে তাদের দোকানের কর্মচারী রনি কে ফোন দিয়ে বলে যে তাকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা জিম্মি করেছে। তাদের দেওয়া ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারে ১০ লক্ষ টাকা পাঠালে তাকে ছেড়ে দিবে। পরে সেই একাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ পাঠিয়ে ইসাহাক কে মুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা উল্লেখিত ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার তদন্ত করে জানতে পারে যে, উক্ত একাউন্টটি ঢেউখালী ইউনিয়নের মৌসুমী নামের এক মেয়ের। পরে মৌসুমির বিরুদ্ধে সদরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ইসাহাকের স্ত্রী। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে মৌসুমির সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। খোঁজাখুজির এক পর্যায় গত ৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) পুলিশের হাতে আটক হয় মৌসুমি।
মৌসুমি কে ধরার পর জানাযায় হানি ট্র্যাপ চক্রের অন্যতম সদস্য তিনি। এই নিয়ে চক্রের মোট ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ সদস্য কে আটক করে জেল হাজতে পাঠালো সদরপুর থানা পুলিশ।
এই চক্রের বিষয়ে এলাকাবাসীরা বলেন, এই চক্রের বাকি সদস্যদের যদি দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনা হয় তবে আরো বহু ব্যক্তি এই চক্রের খপ্পরে পরে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলবেন।
এ ব্যাপারে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এস আই তানভীর বলেন, এখন সোর্সের ভীষণ অভাব। আগের মত কেও সোর্স হয়ে আসামীদের খোঁজখবর দিতে চায় না। তাই বাকি আসামীদের গ্রেফতার করতে একটু সময় লাগছে।
সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল মোতালেব হোসেন বলেন, এই মামলায় ইতিমধ্যে আমরা ৫ জন কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি। শীঘ্রই আমরা এই চক্রের সকল সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম
সহ-সম্পাদকঃ আবুল কাশেম
বার্তা সম্পাদকঃ রাফসান জাহান
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা)মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০।রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন,চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০
ফোনঃ ০২২২৬৬৩৯৮৪৭
মোবাইলঃ ০১৬০০-৭২২২২৯,০১৯২০-০০৩০৮১
ইমেইলঃchoukasinfo@gmail.com,dainikchoukos@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক চৌকস. All rights reserved.