মনীষ সরকার রানা, স্টাফ রিপোর্টার :
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিকের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নিয়ে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় এক নেতার বাসায় বসে একসঙ্গে ১৫টি ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছে। এতে দীর্ঘদিন দলের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করা ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এছাড়াও উপজেলা বিএনপির দুই আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্ত দূর করার দাবি জানান তারা।
রোববার (৯ মার্চ) বিকেলে উপজেলার ধুমাইটারী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা মাঠে এ সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এতে তৃণমূল বিএনপির বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, কোনো ধরনের কর্মীসভা ছাড়াই তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে সুবিধাভোগীদের পদে বসিয়ে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। এতে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন এবং দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। আর ২০২৩ সালে উপজেলা বিএনপির এই আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি করা হয়েছিল। সেই কমিটি এখনো বহাল দেখিয়ে কিভাবে ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদন হয় সেটাও বোধগম্য নয়। বিএনপির দুর্দিনে যারা রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, হামলা-মামলার শিকারসহ কারাবরণ করেছেন। তাঁদের অনেককে কমিটিতে রাখা হয়নি। বরং যারা কখনো রাজপথের রাজনীতি করেননি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নিয়েছেন! তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে!
প্রশ্ন তুলে নেতাকর্মীরা বলেন, ‘কিভাবে ঢাকায় বসে কোনো কর্মীসভা ছাড়াই একসঙ্গে ১৫টি ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন করা হলো? এটি কি বিএনপির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? আর ২০২৩ সালে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল জেলা কমিটি। সেই কমিটি বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে গোপন রেখেছেন জেলা নেতারা। সম্প্রতি অনুমোদন হওয়া কমিটি প্রকাশ করার পরেও পূর্বের বাবুল-মাহমুদুল কমিটি কিভাবে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিতে পারে? জেলা বিএনপির সভাপতি মঈনুল হাসান সাদিক এখানে আত্মীয়করণ চালু করেছেন বলে অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।
বক্তারা জানান, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটি গঠনের আগে কর্মী সমাবেশ করে তৃণমূলের মতামত নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন।
বক্তারা আরও বলেন, ২০২২ সালে জেলা বিএনপি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিল। তারা ইউনিয়ন কমিটিগুলো করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৩ সালে আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালের আহ্বায়ক কমিটি গোপনে ২০২৩ সালের কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং জেলা বিএনপিও এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো অবস্থান নেয়নি। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ তিন মাস থাকার কথা থাকলেও, সেটি তিন বছর ধরে চলছে। একই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছেন, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক।
সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের আগে পদ-পদবি বাণিজ্য হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তি ও সুবিধাভোগীদের পদ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। আমরা রাজপথে লড়েছি, নির্যাতন সহ্য করেছি, জেল খেটেছি। অথচ আমাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সুবিধাভোগীদের নেতৃত্বে বসানো হয়েছে। এটা কি বিএনপির জন্য কল্যাণকর?
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা স্পষ্ট দাবি জানিয়ে বলেন, বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। জেলা বিএনপিকে দ্রুত এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। যদি এই কমিটি বাতিল না করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
তাঁরা আরও বলেন, ‘বিএনপিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। অন্যথায় দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়তেই থাকবে, যা ভবিষ্যতে দলের জন্য ক্ষতিকর হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল হুদা, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাজেদুর রহমান প্রামাণিক রুনু, শান্তিরাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন মিলন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জামিউল ইসলাম জমু, রামজীবন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আল আজাদ, বেলকা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শামসুজ্জামান প্রামাণিক তনু, সাবেক ছাত্র নেতা মাইদুল ইসলাম বাবু, দহবন্দ ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সদস্য মোস্তাইন বিল্লাহ প্রমুখ।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্য সচিব মাহমুদুল হাসান প্রামানিক বলেন-তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ করা হয়েছে। তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তারা কেন্দ্র ও জেলার নির্দেশেই ১৫টি ইউনিয়নে আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।