মোছাদ্দেক হোসেন বাহার ভোলা জেলা প্রতিনিধি/
দেশব্যাপী নারী অপহরণ ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ভোলায় যুবশক্তি ছাত্র কল্যাণ সংঘ স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে এক বিশাল র্যালি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ভোলা প্রেসক্লাব সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ভোলা জেলা পর্যবেক্ষক আরিফুল ইসলাম, জেলা আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুগ্ন আহ্বায়ক হাসনা আক্তার, সদর উপজেলা সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আনিকা হাবিবা, নাজিউর রহমান কলেজ টিম সভাপতি ইমাম হোসেন জিহাদ সহ সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নেতৃত্বে, প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাষ্টি (পরিচালনা পরিষদের) চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের দিক নির্দেশনায় উক্ত সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন।
জেলা আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে নারী অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি ধর্ষকদের আরও সাহসী করে তুলছে। বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ বন্ধ করতে হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কেবল আইন প্রয়োগই যথেষ্ট নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি। পরিবারের শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদী র্যালি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করো, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই এমন বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
আয়োজক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, সমাজের প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা আরও বলেন, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, যেন আর কোনো নারী বা মেয়ে শিশুকে নির্যাতনের শিকার হতে না হয়। সংগঠনটি ভবিষ্যতেও এমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে জানানো হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ছেলেদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা নারীর প্রতি সম্মানবোধ শেখে। ধর্ষণের শাস্তি কঠোরভাবে কার্যকর করতে পারলে অপরাধীরা ভয় পাবে এবং সমাজে এই প্রবণতা কমবে বলে তারা মনে করেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
নারী নির্যাতন বন্ধে শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, বরং আইন প্রয়োগের কার্যকারিতা নিশ্চিত করাও জরুরি। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষার চর্চা বাড়ানোই পারে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।