স্টাফ রিপোর্টার- জাহারুল ইসলাম জীবন।
মাগুরার শিশু আছিয়ার নির্মম ধর্ষণ ও মৃত্যু, বগুড়ার ঈশিতার ধর্ষণ - এই ঘটনাগুলো যেন দেশের ধর্ষণ পরিস্থিতির এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। সারাদেশে যখন ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা নিয়ে বিক্ষোভ, তখনো থামছে না এই জঘন্য অপরাধ। মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা যেন বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০১ জন নারী। এর মধ্যে ৩৪ জন ধর্ষণ‑পরবর্তী হত্যার শিকার এবং ৭ জন ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন। ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ৭৮৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ধর্ষণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সম্প্রতি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে দুইজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। রংপুরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত দুই দিনে সারাদেশে ১৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে গড়ে প্রতি ৯ ঘণ্টায় একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
কয়েক মাস আগে ঢাকার ব্যস্ততম ফুটপাতে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী এবং কুমিল্লার বাসে এক গার্মেন্টস কর্মী গণধর্ষণের শিকার হন। সিলেটে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিজ গৃহে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন থামছে না এই ধর্ষণ? কেন অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তকারী প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগনের অপরাধীদের সঙ্গে গোপনীয় আর্থিক যোগ সাজ হেতু তদন্ত রিপোর্ট বা চার্জশিট দুর্বলভাবে আদালতে দাখিল করা সহ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া, রাজনৈতিক পরিচয় ও ক্ষমতার প্রভাবের কারণে অপরাধীরা প্রতিনিয়তই পার পেয়ে যাচ্ছে।
অপরাধীরা জানে, পুলিশ, আইন, বিচার তথা প্রশাসন সবকিছুই তাদের অপরাধের আশ্রয়স্থল। তারা ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সবকিছু দমিয়ে রাখতে পারবে। তাই তারা নির্ভয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়।
ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসির বিধান থাকবে।
মানুষের আইন মানার প্রধান কারণ হলো শাস্তির ভয়। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার কারণেই অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। একটি ধর্ষণেরও যদি দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, তাহলে ধর্ষণের ভয়াবহতা কমতো।
ধর্ষকের কোনো বিশেষ পরিচয় নেই। ধর্ষক যেই হোক, তার পরিচয় সে ধর্ষক। ধর্ষকের শরীর থেকে প্রথমে রাজনীতির পোশাক খুলে ফেলতে হবে। তারপর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে কঠোর আইন থাকলেও আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন অতীব জরুরী। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার আইনি জটিলতা পরিহার করতে হবে। ধর্ষণের লাগাম জিরো টলারেন্স নীতিতে টেনে ধরতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তৎপর হতে হবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রশাসনের সর্বস্তর সহ ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সবাইকে এক সঙ্গে সম্মিলিতভাবে গণ-সোচ্চার হতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম
সহ-সম্পাদকঃ আবুল কাশেম
বার্তা সম্পাদকঃ রাফসান জাহান
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা)মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০।রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন,চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০
ফোনঃ ০২২২৬৬৩৯৮৪৭
মোবাইলঃ ০১৬০০-৭২২২২৯,০১৯২০-০০৩০৮১
ইমেইলঃchoukasinfo@gmail.com,dainikchoukos@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক চৌকস. All rights reserved.