তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে কাজে লাগছে না ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু। মনু নদের উপর নির্মিত রাজাপুর সেতুর কাজ শেষ হবার চার বছর পার হলেও সংযোগ সড়ক তৈরী না হওয়ায় ভোগান্তি আর ক্ষোভ এলাকাবাসীর।
সেতুর নীচ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সরে গেছে ব্রিজের পিলারের নিচের মাটি। চালুর আগেই নব নির্মিত সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নেমেছেন আন্দোলনে। ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয়সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাথে একই উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিলো মনু নদ। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় খেয়া দিয়ে পারাপার হতেন এলাকাবাসী। তাই মনু নদের উপর একটি সেতুর দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের। হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষ খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর নাম দেওয়া হয় রাজাপুর সেতু। সেতুর দুই পাশে কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়ক। কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়কের রাজাপুর এলাকায় রাজাপুর সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে চার বছরেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। যার কারণে স্থানীয় লোকজন এই সেতুর সুফল পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে সেতুটি চালুর আগেই সরে গেছে ব্রিজের পিলারের নিচের মাটি। আর এজন্য মনু নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ি করছেন এলাকাবাসী। ব্রিজটি দ্রুত চালু ও বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী নেমেছেন আন্দোলনে।
স্থানীয়রা জানায়, সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় অনেক খুশি ছিলেন তারা। কিন্তু সংযোগ সড়ক তৈরী না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এখন। বিশেষ করে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, ছোট বাচ্ছা ও বয়োবৃদ্ধদের কষ্ট অনেক বেশি। পায়ে হেঁটে পারাপার হতে হচ্ছে সেতু। আর রোগী নিয়ে দুর্ভোগ সীমাহীন।
সংযোগ সড়ক নির্মাণ, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সংগঠিত এলাকাবাসী ইতোমধ্যে করেছেন মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক বরাবর দিয়েছেন স্মারকলিপি।
আন্দোলনকারীদের একজন ফয়জুল হক বলেন, সেতুটি চালুর আগেই বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অতচ কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। দুটি পিলারের নিচ থেকে যে পরিমাণ মাটি সরেছে অচিরেই ব্যবস্থা না নিলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছি। তাছাড়া চার বছর থেকে ব্রিজটি পরে আছে সংযোগ সড়কের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। কাল বিলম্ব না করে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করে এটি চালুর দাবি জানান তিনি।
উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম সেতুটি নির্মাণ করায়। কিন্তু এটি ব্যবহার করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সেতুটি তিনটি ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। হাজার হাজার মানুষ এটি ব্যবহার করেন। চালু হলে এলাকার যাতায়াত ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সওজ সূত্র জানায়, রাজাপুর সেতুটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামের সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটির কাজ পায়। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়।
সেতুটি ব্যবহারের জন্য দুই পাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জামিল-ইকবাল’ নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের জন্য তিন দফা কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হয়।
সওজ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ বলেন, সংযোগ সড়কের জন্য মোট ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। তাছাড়া সংযোগ সড়কে ২০টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হয়েছে। তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলেছি। এটি তারা ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়ত ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কা থাকবে।
এবিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে। এরমধ্যে অনেককে জেল জরিমানা করা হয়েছে। কোন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ থাকার শঙ্কা থাকলে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম
সহ-সম্পাদকঃ আবুল কাশেম
বার্তা সম্পাদকঃ রাফসান জাহান
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা)মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০।রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন,চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০
ফোনঃ ০২২২৬৬৩৯৮৪৭
মোবাইলঃ ০১৬০০-৭২২২২৯,০১৯২০-০০৩০৮১
ইমেইলঃchoukasinfo@gmail.com,dainikchoukos@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক চৌকস. All rights reserved.