তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালত কর্তৃক নির্দেশনা জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে কৃষকের মালিকানাধীন জমির প্রায় কয়েক লাখ টাকার ফসল (আলু) তুলে নিয়েছে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এসময় ভুক্তভোগী কৃষকরা ৯৯৯ এ কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানালে থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। শনিবার (১৫ই মার্চ) সকালে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ তুলেন, হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপি'র প্রভাবশালী নেতা ফারুক আহমদ পান্না জড়িতদের মদদ দিচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকার সূত্রের বরাতে ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামে বাড়উগাঁও মৌজায় বিভিন্ন দাগে দুই একর কৃষি জমি থেকে কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, আব্দুল বাছিত বাচ্চু, আব্দুল গফুর, আব্দুস শহীদ, আব্দুল মন্নান, আব্দুল আজিজ, ফয়সল মিয়া গংদের কৃষি জমি থেকে কয়েক দফায় জোরপূর্বক ফসল (আলু) তুলে নিয়ে যায় হরিচক গ্রামের বাসিন্দা, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান (৩৫), দুই নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিস মিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়ছর মিয়া (৪০) এর নেতৃত্বে তাদের সহযোগী শাহিন মিয়া, আব্দুস সালাম সুরুজ, আব্দুর রশীদ, ছবদর আলী, আকমল ও ওয়াজিদ গংরা। এঘটনায় ভূমি দখলের অভিযোগ এনে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি কৃষক মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ফজলুর রহমান গংয়ের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (নং- ৪৯/২০২৫) দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালতের আদেশ অনুযায়ী উভয়পক্ষকে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কুলাউড়া থানার এসআই মো. মুহিত মিয়া ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফজলুর রহমান ও শ্রমিকলীগ নেতা কয়ছর মিয়া গংরা শনিবার সকালে মুহিবুর রহমান গংদের কৃষি জমিতে জোরপূর্বক লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে প্রবেশ করে কয়েক লাখ টাকার ফসল (আলু) তুলে নিয়ে যান। এর আগে গত ১১ই মার্চ ফজলুর রহমান গংরা মুজিবুর রহমানের ছেলে লুৎফুর রহমান সুমনসহ স্থানীয় কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন কৃষক লুৎফুর রহমান। পরে তিনি ফজলুর রহমান গংয়ের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে অবাধে মাটি কাঁটা ও কৃষি জমি থেকে ফসল তুলার বিষয়ে বাঁধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলায় মুহিবুর রহমানের ছেলে মাহবুব হোসাইন (৩০) আহত হন।
সাধনপুর গ্রামের কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, লুৎফুর রহমানসহ আরো অনেক কৃষক বলেন, প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের দোসর ফজলুর রহমান ও কয়ছর মিয়া গংরা আমাদের মৌরসী জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মনু নদীর চর এলাকায় আমাদের জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি। জমি থেকে ফসল উত্তোলনের সময় আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাঁধা দেয় প্রতিপক্ষরা। ওই ঘটনায় কুলাউড়া থানা ও বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করি। পরে আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষরা ফসলি জমি থেকে প্রায় ৪০০ মণ আলু তুলে নিয়ে যায়, যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের হাজীপুর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা পান্না প্রতিপক্ষকে মদদ দিচ্ছেন এমনটাই অভিযোগ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফজলুর রহমান ও ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা কয়ছর মিয়া তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কেন কৃষকদের জমি থেকে আলু তুলবো এবং মাটি বিক্রি করবো। ঠিকাদার মাটি আনতেছে ডিসি খতিয়ানের জমি থেকে এবং কিছু মাটি কৃষকদের টাকা দিয়ে আনতেছে। আমাদের গ্রামের রাস্তার উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি কাজে আমরা সহযোগিতা করেছি মাত্র।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ফারুক আহমদ পান্না বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। আসন্ন হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপি'র কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা কৃষকদের জমি থেকে ফসল ও মাটি কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে বলছি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন সরকার বলেন, ঠিকাদার যদি কৃষকদের জমি থেকে ক্ষতিপূরণ ছাড়া মাটি নিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর কৃষকের জমির মালিকানা থাকলে তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহিত মিয়া বলেন, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ থাকায় আদালতের নির্দেশে ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করে দিয়েছি। নোটিশ ভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কুলাউড়া থানার ওসি মো. গোলাম আপছার বলেন, আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করে কৃষকদের জমি থেকে ফসল তুলার অভিযোগ পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ্ জহুরুল হোসেন বলেন, কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে এভাবে কেউ মাটি কেটে নিতে পারবে না। কৃষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পেলে মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম
সহ-সম্পাদকঃ আবুল কাশেম
বার্তা সম্পাদকঃ রাফসান জাহান
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা)মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০।রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন,চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০
ফোনঃ ০২২২৬৬৩৯৮৪৭
মোবাইলঃ ০১৬০০-৭২২২২৯,০১৯২০-০০৩০৮১
ইমেইলঃchoukasinfo@gmail.com,dainikchoukos@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক চৌকস. All rights reserved.